জরিমানাহীন রিটার্ন জমার সময় একাধিকবার বাড়িয়েও কোম্পানি করদাতাদের রিটার্ন নিশ্চিত করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২৩-২৪ করবর্ষে জরিমানাহীন আয়কর রিটার্ন জমার সময়সীমা ছিল ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর প্রথম দফায় ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ও দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হয় ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। দু'দফা সময় বাড়িয়ে বছর শেষে কোম্পানি রিটার্ন জমা পড়েছে ১৫ শতাংশেরও কম।
রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত কোম্পানি প্রায় তিন লাখ। আর এনবিআর বলছে, এর মধ্য থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রিটার্ন জমা দিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার। আর এ গণ্ডি পেরোয়নি কোনো অর্থবছরেই। যদিও লাভ কিংবা লোকসান যাই হোক না কেন, নিয়ম অনুযায়ী বছর শেষে দিতে হবে আয় ব্যয়ের হিসাব।
নিবন্ধনের পর একটি কোম্পানিকে ভাড়ার চুক্তি, ট্রেড লাইসেন্স ও টিআইএন নেয়ার পর খুলতে হয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। এরপর যত দ্রুত সম্ভব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন পরিচালকের অ্যাকাউন্ট থেকে চেকের মাধ্যমে নিতে হয় কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। বাধ্যবাধকতা আছে কোম্পানি প্রতিষ্ঠার অর্থবছরের মধ্যেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সে অর্থ প্রবেশে। এরপর পরিশোধিত মূলধনের ওপর ট্যাক্স নির্ধারণ করবে এনবিআর। তবে, কোম্পানির অ্যাকাউন্টে অযাচিত অর্থ লেনদেন করলে জটিলতায় পড়তে হয় মালিককে।
এরপর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় অডিট রিপোর্ট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, পরিশোধিত মূলধনের তথ্য, ব্যাংকঋণের তথ্য, পণ্য সরবরাহ হলে উৎসে করের চালান সনদ, কর জমার চালান কপিসহ ট্রেড লাইসেন্সের কপি, এছাড়াও প্রয়োজনীয় তথ্য।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক অডিট ও জটিলতার মধ্যদিয়ে আয়কর রিটার্ন দিতে চায় না ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো। যার ফলে শুধু প্রতিষ্ঠিত ও ধারাবাহিক রিটার্ন দাতারাই আয়ব্যয়ের হিসাব দিচ্ছেন এনবিআরকে। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে টানতে নীতিগত সংস্কার ও কার্যক্রম আরও সহজ করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেই।
এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, 'আরজেএসির সাথে তাদের রিটার্ন সাবমিট করার জন্য যে হিসাব আছে, সেখানে বাকিদের অক্ষম মনে হয়। সেজন্য আমার মনে হয় এখানে সংস্কার দরকার। চার্টার্ড একাউন্টেন্ট আছে তাদের থেকে সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন একটা অ্যাকাউন্টে হয়। প্রত্যেকটি ভাউচারসহ। এই বিষয়ে জটিলতা বলবো না আমি, আমরা তো পালনই করিনি।'
প্রত্যেক নিবন্ধিত কোম্পানিকেই নির্দিষ্ট সময় পর রিটার্ন দিতে হয় আরজেএসির কাছে। রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বলছেন, কোম্পানিগুলো এনবিআরকে আয়কর রিটার্ন দিচ্ছে কিনা তার হিসাব আরজেএসিরও নিতে হবে। অন্যথায় শুধু এনবিআরের পদক্ষেপে নিশ্চিত হবে না কোম্পানি রিটার্ন।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, 'অডিডেটেড একাউন্টসের কপি দিতে হয়। কারণ রেগুলেটর থেকে লাইসেন্স দিয়েছে। সে যদি না দেখে যে রিটার্ন দিয়েছে কিনা, ধরার কথা তো তার। তাহলে তারই তো কর দেয়ার ব্যাপারে দায়িত্ববোধ আসবে না। যদি এমন কোনো নিয়ম থাকতো যে, লাইসেন্স বাতিল করে দেয়া হবে। যদিও এই নিয়ম আছে কিন্তু, মানা হয় কতটা?'
যদিও আরজেএসসির তথ্য বলছে, সংখ্যায় ৩ লাখ হলেও তাদের কাছেই তথ্য দিচ্ছে না ৮০ শতাংশেরও বেশি কোম্পানি। আর, এনবিআরকে রিটার্ন দিতে তাদের কোম্পানি আইনে নেই কোনো বাধ্যবাধকতা।