পরিষেবা
অর্থনীতি
2

চালু করতে না পারায় অলস পড়ে আছে ৮০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ লাইন

মাত্র ৩ কিলোমিটার সড়কে গাছের ডালপালার কারণে চালু করা যাচ্ছে না ভোলায় প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক স্ট্যান্ডার্ড বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। এক বছর আগে এ সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখন তা অলস পড়ে আছে। অন্যদিকে ৪০ বছরের পুরাতন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহে ভোগান্তি বেড়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ ও গ্রাহকদের। সামান্য বৃষ্টি-বাতাসেই পুরাতন বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। আর প্রয়োজনীয় চাপ নিতে না পারায় হচ্ছে লোডশেডিং। ভোগান্তি থেকে বাঁচতে নতুন লাইনটি জরুরি ভিত্তিতে সচল করার দাবি গ্রাহকদের।

ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনাল থেকে মাদরাসা বাজার পর্যন্ত ছায়া ঢাকা পিচঢালা সড়কে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তারগুলো গাছের ডালপালার সাথে পেঁচিয়ে আছে। অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটিগুলো ঢেকে গেছে রাস্তার পাশের গাছে।

ভোলার বোরহানউদ্দিন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এক বছর আগে প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩ কেভির ধারণক্ষমতার ৪২ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত করে বিদ্যুৎ বিভাগ। অত্যাধুনিক স্ট্যান্ডার্ডে এ লাইনে ৪০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোড নিতে পারবে। বর্তমানে এ লাইনের প্রায় ৩৯ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সরবরাহের উপযোগী। তবে, গাছের ডালপালার কারণে বাকি ৩ কিলোমিটার লাইনটি চালু করা যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে ৪০ বছরের পুরনো সঞ্চালন লাইনে বোরহানউদ্দিন থেকে বিদ্যুৎ আনতে হচ্ছে।

স্থানীয় একজন বলেন, 'এ গাছের জন্য আমরা বিদ্যুৎ পাই না। একটু বাতাস হলে গাছের ডাল ভেঙে তারের ওপর পড়ে। এর জন্য বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হই।'

এদিকে অত্যাধুনিক এ সঞ্চালন লাইনটি চালু না হওয়ায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। আকাশে মেঘ জমলে বা সামান্য বজ্রপাতে পুরনো লাইনটি অচল হয়ে জেলা সদর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ছাড়াও পুরনো লাইনে নেয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় লোডও। এতে দীর্ঘসময়ের বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ জেলা সদরের পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি গ্রাহক। লোকসান গুণতে হচ্ছে বিদ্যুৎনির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর।

একজন বিদ্যুৎ গ্রাহক বলেন, 'অনেকগুলো কাজের অর্ডার আছে। বিদ্যুৎ না থাকায় খুব ঝামেলায় আছি। আগে একটা কাজ নিলে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লাগতো, এখন বিদ্যুৎ না থাকায় সে কাজ কয়েকদিনেও ডেলিভারি করতে পারি না।'

পুরনো লাইনের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে উল্লেখ করে বিতরণকারী সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি জানিয়েছে গাছগুলো বন বিভাগের হওয়ায় তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তবে বন বিভাগের দাবি গাছ অপসারণে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।

ভোলা ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ বলেন, 'গাছ অপসারণে আমরা নিজেরা একা কিছু করতে পারছি না। এখানে বন বিভাগের একটা বিষয় আছে। এখানে গাছের ডাল কেটে দিতে পারলে আমি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবো।'

ভোলা উপকূলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, 'আমরা এগুলো কোনো প্রক্রিয়া ছাড়া কাটতে পারি না। প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি, টেন্ডার হয়েছে। তারা গাছের দাম পরিশোধ করে গাছ কাটার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।'

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জেলা সদরের সাড়ে ৩৪ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টটি বিকল হওয়ার পর ৪২ কিলোমিটার দূরের বোরহানউদ্দিন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর