পরিষেবা
অর্থনীতি
0

গরমে সঞ্চয় ভেঙে কিনছেন এসি-চার্জার ফ্যান

নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের কাছে গরম নিয়ে এসেছে বাড়তি খরচ ও আর্থিক টানাপড়েন। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার স্বস্তি পেতে সঞ্চয় ভেঙে এসি, এয়ার কুলার ও চার্জার ফ্যান কিনছেন।

মাথার ওপর টিনের চাল, তার উপর গনগনে সূর্য। তীব্র গরমে থাকা দায় তবুও ১০ বছর ধরে এই ঘরেই পরিবার নিয়ে বাস করছেন জাহাঙ্গীর আলম। উত্তাপ থেকে বাঁচতে রয়েছে একটি টেবিল ও একটি সিলিংফ্যান, তাও হাঁসফাঁস অবস্থা। প্রয়োজন আরও বড় ফ্যানের কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতায় এটুকুই সম্বল।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতি বছরই তো গরম পড়ে। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে, বেশিই গরম পড়ছে। টিনের ঘর তো, বেশিই গরম হয়ে যায়। আর সিলিং ফ্যানের বাতাস খুব গরম।

ঋতু পরিক্রমায় গ্রীষ্মের শুরু আর এর সাথে তাপপ্রবাহে পুড়ছে চারপাশ। শহরের অলিগলির ফুটপাতে শরবতের দোকানগুলোই বলে দিচ্ছে গরমে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের খরচ বেড়েছে।

গরমে ফলের দোকানেও বিক্রি বেড়েছে। রসালো দেশিয় ফল খানিকটা স্বস্তি দিলেও দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিদিনের খরচের তালিকা।

নগরবাসীরা বলেন, ‘এতো গরম, কোথাও কিছু করে শান্তি পাওয়া যাচ্ছে না।’

শুধু কী বাড়ির বাইরে বের হলেই খরচ, বাড়িতে একটু প্রশান্তি পেতেও গুণতে হচ্ছে অর্থ। সিলিং ও চার্জার ফ্যান কেনার চাপও বেড়েছে। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে অতিরিক্ত ফ্যানের প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে, সেই সাথে নষ্ট হওয়া ফ্যান মেরামতেও অনেকে ছুটছেন। সেখানেই স্বল্প অর্থে মধ্যবিত্তের খরচ কমানোর চেষ্টা চলছে।

একজন বলেন, ‘গরমে ফ্যানের ব্যবহার বেশি হয়, নষ্টও বেশি হচ্ছে। আয় কম বলে নষ্ট ফ্যানই মেরামত করতে নিয়ে আসছি।’

ফ্যানের চাহিদা এতোটাই বেড়েছে যে, যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে কারখানা মালিকরা। তাই বিক্রেতারাও চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করতে পারছেন না। আর আগের থেকে দামটাও বেড়েছে। প্রকারভেদে প্রতিটি চার্জার ফ্যানের দাম অন্তত হাজার টাকা বেড়েছে।

তীব্র রোদে এসির চাহিদাও বেড়েছে। বাহারি সাজে সেজেছে শোরুমগুলো। এসি এখন আর ধনীদের আয়েশি পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিলাসী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এখন হয়ে উঠেছে প্রয়োজনীয় পণ্য। নতুন এসি কিনতে তাই দোকানে দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। সঞ্চয় ভেঙে পছন্দের এসি কিনতে ছুটছেন মধ্যবিত্তরা।

এক এসি ক্রেতা বলেন, ‘আবহাওয়ার যে অবস্থা, সে প্রেক্ষাপটে এসি খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফ্যান চালিয়েও গরম কমছে না, বাধ্য হয়েই এসি কিনতে হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্টরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আবাসিক ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রতিবছর গড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার এসি বিক্রি হয়। এপ্রিল, মে ও জুন মাসে সবচেয়ে বেশি এসি বিক্রি হয়। বছরের ৯০ শতাংশ এসি এই ৩ মাসে বিক্রি হয়।

অন্য সময়ের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে নতুন এসির দাম। ১ টনের এসির দাম ৫০ হাজার থেকে শুরু আর সর্বোচ্চ ২ টনের এসি ৭৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

এক বিক্রেতা বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় কিছুটা এসি দাম বেড়েছে। আর তুলনামূলকভাবে এসির চাহিদাও বেড়েছে।’

শুধু নতুন এসি নয় পুরনো এসি কিনতে ও সারাতে ব্যস্ততা বেড়েছে। এসির মিস্ত্রি ও দোকানে বেড়েছে কাজ।

অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘এই ঋতুতে গরমে স্বস্তি পেতে সঞ্চয় ভাঙছে মধ্যবিত্তরা। অসুস্থ হলেও খরচ হচ্ছে জমানো অর্থ। এতে সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ছে।’