পরিষেবা
অর্থনীতি
0

চট্টগ্রামে গ্যাস সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প-বাণিজ্য

বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামে গ্যাস বিপর্যয়ের মূল কারণ একমুখী এলএনজি নির্ভরতা।

বিকল্প উৎস থেকে সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকায় একবছরে একাধিকবার বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বন্দরনগরী। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প-বাণিজ্য।

এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ ও ত্রুটির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ গ্যাস সংকটে পড়ে পুরো চট্টগ্রাম। এতে বন্ধ হয়ে যায় গ্যাসনির্ভর ছয় হাজার শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানা। স্থবিরতা নেমে আসে জনজীবনে। রান্নার চুলা থেকে গণপরিবহন সবই বন্ধ হয়ে যায়।

বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও কখনোই চাহিদার সমপরিমাণ গ্যাস পায়নি বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। চাহিদার সঙ্গে যোগানের ব্যাপক ব্যবধানের কারণে কখনও বিদ্যুৎকেন্দ্র, কখনও বা সার কারখানা বন্ধ রেখে রেশনিং করে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ করছে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি (কেজিডিসিএল)। ২০১৮ সালে কক্সবাজারের মহেশখালীতে সাগরে এলএনজি গ্যাসের দুটি টার্মিনাল স্থাপন করা হলেও সংকটের সুরাহা হয়নি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, একসময় বাখরাবাদ গ্যাসের বিদ্যমান পাইপলাইন দিয়ে সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চলের গ্যাস চট্টগ্রামে আনা যেত। ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানির পর থেকে বাল্ব লাগিয়ে ওই্ লাইন ওয়ানওয়ে করে ফেলা হয়। শুধু এলএনজি’র একমুখী নির্ভরতা পুরো চট্টগ্রামকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে দাবি তাদের।

সুপার নিটিং অ্যান্ড ডাইংয়ের ম্যানেজার মো. সোলায়মান বলেন, ‘এলএনজি পুরোটা অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমি মনে করি, এটি সিএনজি এবং এলএনজিতে কনভার্ট করে রাখা উচিত ।’

গত বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানলে এলএনজি টার্মিনাল নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়ায় চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সবর্শেষ একটি টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণে যাওয়ার পর গত চার মাস ধরে চরম গ্যাস সংকটে আছে চট্টগ্রাম। এর মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত শুক্রবার গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আবারও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এ্ই অঞ্চল। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় পণ্যের দামও বাড়ছে।

কেএসআরএম-এর পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘একদিন বন্ধ থাকলে আমাদের পুরো উৎপাদনই বন্ধ হয়ে যায়। একইসঙ্গে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতাও কমে যায়। এতে করে আমাদের ক্ষতি হয়ে যায়।’

শিল্প মালিকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীসহ সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে গড়ে ওঠা শিল্পখাতে বিপুল অংকের বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়বে।

কেজিডিসিএল-এর মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আমিনুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে সংকট হলে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা আছে। তবে মহেশখালীতে ল্যান্ডবেইজ এলএনজি টার্মিনাল হলে আর এই সংকট থাকবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাম স্থিতিশীল না হওয়ায় এলএনজি আমদানি ব্যয়বহুল। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এলএনজি’র দাম বাড়ায় স্পট মার্কেট থেকে কেনা বন্ধ রাখতে হয় বাংলাদেশকে। এজন্য নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের আহ্বান তাদের।