অগ্রযাত্রার মূল হাতিয়ার হবে স্বনির্ভরশীলতা। আর সেই হাতিয়ারের শক্তিই হবে জনগণ। তাই নিজেদের আয়ের হিসাব নিকাশ সরকারকে দেন নাগরিকরা। সেখান থেকে নিজের আয়ের একটি অংশ দিচ্ছেন করদাতারা। সরকার চাচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণার এসব কর একত্র করে সাগর সমান জাতীয় বাজেট নির্ধারণ করতে।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে ভ্রমণ ও আয়কর থেকে আসবে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮শ' কোটি টাকা।
তবে প্রথম প্রান্তিকে জুলাই-আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে শুধু এই খাত থেকে ২৭ হাজার ১শ' ৬৮ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৩ হাজার ৬শ' ৪১ কোটি টাকা। বিগত কয়েক অর্থবছরে ধাপে ধাপে বেড়েছে এর লক্ষ্যমাত্রা। গত অর্থবছরে ছিলো ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআর বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় তার আগের অর্থবছরে ১১ শতাংশ আয় ও ভ্রমণ কর আদায় বেশি হয়েছে। অতীতের বছরগুলো হিসাব করলে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি অর্থবছরে ১০ হাজার কোটি টাকা করে বেড়েছে আয়কর আহরণ।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে যেখানে আয়কর আদায় ছিলো ৫২ হাজার কোটি টাকা, সেখানে ৭ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। রাষ্ট্রের স্বনির্ভশীলতায় নিজের অংশিদারিত্বের বৃদ্ধিকে দায়িত্ববোধ বলেই মনে করেন করদাতারা। তবে, তাদের আছে প্রত্যাশা। রাজস্বের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ ব্যয় হবে দেশ ও জাতির কল্যাণে।
আয়কর জমা দিয়েছেন এমন কয়েকজন নাগরিক এখন টেলিভিশনকে জানান, এ টাকা রাষ্ট্রের কাজে এবং উন্নয়নে সঠিকভাবে ব্যয় হবে সেই প্রত্যাশা করি।হাসপাতাল, চিকিৎসা খাত থেকে শুরু করে সকল খাতে এর ব্যবহার করতে হবে।
রাজস্ব আহরণের পরিধি বাড়াতে এনবিআরের নজর আয়করের দিকে। ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর নেয়ার মাধ্যমে সে নজরের আওতায় এসেছে প্রায় কোটির কাছাকাছি ব্যক্তি। সংখ্যা বাড়লেও টিনধারীর আয়ের হিসাব পেতে আইনে যুক্ত করতে হয়েছে আরও বাধ্যবাধকতা।
ব্যাংক বীমা কিংবা আর্থিক লেনদেন, ৪৩ টি কাজে দিতে হবে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র। যার কারণে আয় করযোগ্য না হলেও হিসাব দিচ্ছেন রিটার্নদাতারা।
চলতি অর্থবিলে একজন ব্যক্তির বার্ষিক সর্বনিম্ম করযোগ্য আয় নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এর বেশি হলে কর দিতে হবে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ। তবে আইনে যুক্ত করা হয়েছে এ আয়ের হিসাব দিতে হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই।
সঞ্চয় পত্র বিনিয়োগ কিংবা দানের ওপর মিলবে কর রেয়াতও। সব আয়োজনই করদাতাকে কাছে টানতে করা হচ্ছে।
আইনের খাতায় নানা যোগ-বিয়োগসহ অনলাইনে রিটার্ন জমার পদ্ধতিগত অগ্রগতিতে এ বছরের আয়কর ব্যবস্থাকে একটু ভিন্নভাবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, বাস্তবায়নের ব্যাপারটি সময় সাপেক্ষ।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, পুরনো আইনকে নতুন করে সাজিয়ে আধুনিক করা হয়েছে। চলমান একটা অবস্থার মধ্যে থেকে অনেক দিকে কাজ করে অসুবিধাগুলো উত্তরণের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সেটা সঠিক পথ কি না, তা সময় বলে দিবে।
'আমরা বদলে যাবো, আমরা বদলে দেবো। কর দেবো গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ' স্লোগানে দিনটিকে ব্যক্তি করদাতার রিটার্ন জমার শেষ দিন ধরা হয়। করদাতাদের মাঝে আগ্রহ তৈরি করতে হলে আয়কর দিবস শেষের দিন নয়, বরং দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়েই কর ব্যবস্থা শুরুর পরামর্শ এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যানের।
আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও ভ্যাট-ট্যাক্সে ভর করে প্রতিবছর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এবার থেকে বড় পরিধি হিসেবে ব্যক্তিপর্যায়ের আয়ের খাতে বেশি নজর দেয়ার পরিকল্পনা এনবিআরের।
কিন্তু সার্বিকভাবে এই তিনটি খাতের বাইরে যাদের করযোগ্য আয় আছে- সেক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণে আরও জনসম্পৃক্ত হতে হবে এনবিআরকে। এমনটাই মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা।

