সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে আইএমএফের ত্রিশটি প্রস্তাবনা মেনে নিলেও গত এক বছর সুদের হার আর ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় নানা নীতি গ্রহণ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুরু থেকেই স্মার্ট রেট পদ্ধতি নিয়েও আপত্তি ছিল সংস্থাটির। আপত্তি জানায় মার্জের পদ্ধতিতেও। এছাড়া ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে না দিলে রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে না বলেও জানিয়েছিল সংস্থাটি। তবে এবার আইএমএফের চাপে বাজারে সুদের হার ছাড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আর তাতেও কতদিনে রিজার্ভে ইতিবাচক সাড়া মিলবে তা নিয়ে সংশয় শুরু হয় গত দুই কিস্তিতে প্রকৃত রিজার্ভ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বারবার সংশোধনী আনায়। তাই এবার সফরে এসেই ৮ মের মধ্যে রিজার্ভ বৃদ্ধিতে কী কী কর্মপরিকল্পনা জানতে চায় সংস্থাটি।
পূর্ব-মূল্যায়নের রেশ ধরে এবারও ৩০ জুনের মধ্যে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হলেও তা আগামী ৭ সপ্তাহে অর্জন করা সম্ভব নয়। এমন কথা জানিয়ে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পূরণের প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
আজ (মঙ্গলবার, ৭ মে) আইএমএফ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুদকারের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের সমাপনী সভায় দু’পক্ষই সংশোধনী রিজার্ভ ও রাজস্ব কাঠামো, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা, অর্থপাচার রোধ, জিডিপি ও করের লক্ষ্যমাত্রা কমানোসহ সব বিষয়ে একমত হয়েছে দু'পক্ষ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, 'আইএমএফের ক্লোজিং মিশনে তাদের বিভিন্ন বিষয়ের পর্যালোচনা আমাদের জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমরা আমাদের যুক্তি ও তথ্য উপস্থাপন করেছি। এর ফলে আইএমএফ আমাদের কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে একমত হয়েছে।'
এদিকে চলতি বছরও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি কর ও কর বহির্ভূত রাজস্ব কর্তৃপক্ষ। সেখানে এর মধ্যেই আগামী অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৮০ হাজার ১০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছে সংস্থাটি। তবুও মঙ্গলবার সচিবালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দফায় দফায় বৈঠকে ঋণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত বলে জানিয়েছে জানায় বৈঠক সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকে জলবায়ু অর্থায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, সামষ্টিক অর্থনীতির গতিশীলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। সব ঠিক থাকলে এ মাসের শেষে আইএমএফের বোর্ড সভায় ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে বাংলাদেশের তৃতীয় কিস্তির।
চলতি মে মাসের শেষ দিকে কিংবা আগামী জুনের শুরুতে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করতে পারে আইএমএফ। বাংলাদেশের জন্য অনুমোদন করা ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে আইএমএফের প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় অবস্থান করছে। এরই মধ্যে দলটি সরকারের অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে। এরই মধ্যে দুই কিস্তিতে আইএমএফের ঋণের অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ।