আমদানির জ্বালানি তেল দ্রুত ও কম খরচে খালাসে ২০১৫ সালে এসপিএম প্রকল্প নেয় ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। লক্ষ্য ছিল সাগরের তলদেশ দিয়ে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরাসরি তেল শোধনাগারে সরবরাহ করা। ২০২৩ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও নানা জটিলতায় কমিশনিং হয় ২৪ সালের মার্চে। বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে দেড় বছরেও পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি। ফলে অধরাই রয়ে গেছে এই প্রকল্পের সুফল। পড়ে আছে কোটি টাকার স্থাপনা।
বিগত সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিংকে জি টু জিতে এসপিএম পরিচালনার ভার দিতে চেয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারও শুরুতে এই প্রক্রিয়ায় গেলেও পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে।
আরও পড়ুন:
যৌথভাবে অংশ নেয়া নেদারল্যান্ডের ব্লু ওয়াটার ও চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাব কারিগরিভাবে অযোগ্য হয়। আর পার্টামিনা ট্রান্সকন্টিনেন্টাল ইন্দোনেশিয়া লিমিটেডের আর্থিক প্রস্তাব বিপিসির সম্ভাব্য ব্যয়ের চেয়ে দ্বিগুণ হওয়ায় দরপত্র বাতিল করা হয়।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চুক্তির মেয়াদ হলো আমাদের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তারপর তো আমাদের মেইনটেইনেন্স শুরু করতে হবে। আমাদের ব্যয় থেকে ৫১ শতাংশ বেশি। পরবর্তীতে এটা নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
এদিকে ফেব্রুয়ারিতে এসপিএমের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড ও প্রকল্প হস্তান্তরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। মাত্র চার মাসে আবারো জি টু জির দিকে এগোচ্ছে বিপিসি?
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, ‘আমরা যদি পুরো টেন্ডারে দিকে যায় নতুন করে সেটার প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ। আমাদের জন্য ভালো হয় জি টু জির মাধ্যমে দ্রুত কন্টাক্ট করে ফেলতে পারি।’
অবাক করা ব্যাপার হলো, বাতিল হওয়া দরপত্রের চীন ও ইন্দোনেশিয়ার দুই প্রতিষ্ঠান পুনরায় দূতাবাসের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত কারিগরি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বিপিসি চেয়ারম্যান বলছেন, মূল্য কমানোসহ জি টু জিতে নেগোসিয়েশনের অনেক সুযোগ আছে। কারিগরি ও আর্থিকভাবে যোগ্য হলে এবং সরকারের অনুমোদন পেলেই কেবল চুক্তি হবে।
আমিন উল আহসান বলেন, ‘আমাদের যে চাহিদা সেটা অনুযায়ী তারা সরবরাহ করতে পারে, সেই অনুযায়ী অপারেশনাল সুবিধা দিতে পারে তাহলে চুক্তি হবে।’
নৌ বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের এসপিএম চালানোর অভিজ্ঞতা নেই। তাই চুক্তিতে বিল্ট অপারেটর ট্রান্সফার পদ্ধতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পরিচালনার কাজ দেয়া হলে রাষ্ট্রের এতো বড় ক্ষতি হতো না।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, ‘যারা করছে তাদেরকে এক বছর চালিয়ে দেখাতে বলা উচিত। তারপরে ট্রান্সফার করা হবে।’
বর্তমানে আমদানি করা ক্রুড অয়েল গভীর সমুদ্রে বড় জাহাজ থেকে ভাড়া করা লাইটার জাহাজে করে পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারির ট্যাংকে আসে। এতে পুরো তেল খালাস সময় লাগে ১১ থেকে ১২ দিন। পাইপলাইনে যাবে মাত্র ২ দিনে। এতে জ্বালানি তেল খালাসে সাশ্রয় হবে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা।





