বিশেষ প্রতিবেদন , শিল্প-কারখানা
অর্থনীতি
0

৫৪ বছরেও অপরিণত জল-আকাশপথের রপ্তানি অবকাঠামো

৫৪ বছরের পরিণত স্বাধীন দেশে এখনো অপরিণত জল কিংবা আকাশপথের রপ্তানি অবকাঠামো। রপ্তানির চাপ মোকাবিলায় নেই শাহজালাল বিমানবন্দরের পূর্ণ সক্ষমতা, উল্টো বেড়েছে ব্যয়। তাই, খরচ ও ঝামেলা কমাতে তৈরি পোশাকের ক্রেতারা বেছে নিচ্ছেন ঢাকার বিকল্প পথ। এক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই বলে জানান গার্মেন্টস মালিকরা।

সত্তর দশকের শেষের দিকে দেশ থেকে প্রথম রপ্তানি হওয়া ১০ হাজার পিস তৈরি পোশাকের বাজার এখন সাড়ে ৪ হাজার কোটি ডলার ছুঁয়েছে। যা বর্তমানে মোট রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশ।

বিশাল এই খাতের জন্য কতটুকু সহায়ক ছিল আমদানি রপ্তানির অবকাঠামো? ৫৪ বছরের পরিণত স্বাধীন দেশে এখনও অপরিণত জল কিংবা আকাশপথের রপ্তানি কার্যক্রম।

অতিরিক্ত খরচ ও কাস্টমস জটিলতায় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে পণ্য জাহাজীকরণের প্রশ্ন বহু পুরোনো। দীর্ঘসময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার পর সাগরপথে কমেছে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম। ফলে হঠাৎ চাপ বেড়ে যায় আকাশপথে।

আর জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে রপ্তানি সঙ্কটের পড়ে পোশাক খাত- পরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে আকাশপথে সে চাপ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। তবে এ চাপ মোকাবিলায় শাহজালাল বিমানবন্দরের পূর্ণ সক্ষমতা না থাকায় হারাতে হয়েছে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব।

এ বিমানবন্দরে ২০ বছর আগে তৈরি হওয়া কার্গো ওয়্যারহাউজের পরিধি এক ইঞ্চি না বাড়লেও রপ্তানি বেড়েছে ৩ গুণ।

যেখানে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতায় কালক্ষেপণ, পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়ায় ঢাকার বিমানবন্দর রপ্তানিকারকদের জন্য ব্যয়বহুল।

এছাড়া স্ক্যানিং ও ইডিএস মেশিন না থাকায় ঢাকার আকাশপথ ব্যবহারে কার্গো এয়ারলাইন্স যেমন মুখ ফিরিয়েছে, তেমনি অন্যপথ বেছে নিয়েছে বিদেশি ক্রেতারা।

এক্ষেত্রে কলকতা, কলম্বো আর সিঙ্গাপুরের নাম থাকলেও শীর্ষে রয়েছে মালদ্বীপ। ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে বিমানপথে প্রতি কেজি পণ্য পাঠাতে খরচ হয় ৬ থেকে সাড়ে ৬ ডলার পর্যন্ত।

তবে মালদ্বীপের বিমানবন্দর ব্যবহারে কেজিতে খরচ পড়ে সর্বোচ্চ ৪ ডলার পর্যন্ত। যেখানে সাশ্রয় প্রায় ২ ডলার। তবে এক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই বলে জানান গার্মেন্টস মালিকরা।

রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘বায়ার কিন্তু এতে খুশি না। বাংলাদেশ থেকে এয়ার করতে পারলে তার জন্য সহজ হতো। বাধ্য হয়ে তাদেরকে ভিন্ন বিমানবন্দর ব্যবহার করতে হচ্ছে। বায়াররা চাই আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি হোক।’

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মত হাতেম বলেন, ‘বায়াররা চাই বাংলাদেশ থেকে এয়ার চার্জটা কম হোক। বায়ারের উপর একটা চাপ যাচ্ছেই। অনেক সময় বায়াররা অর্ডার সরিয়ে নেয়ার জন্য পাঁয়তারা করে।’

ক্রেতাদের মাঝে এমন নেতিবাচক ধারণার মধ্যে পোশাক খাতের সাম্প্রতিক অস্থিরতা যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে। প্রভাব পড়েছে পোশাক উৎপাদনে। হারাতে হয়েছে ক্রয়াদেশ।

রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘অবশ্যই অর্ডার অন্য জায়গায় শিফট হয়েছে। পরিস্থিতি যখন ঠিক হবে তখন অর্ডারগুলো ব্যাক করবে।’

ক্রয়াদেশ হারানোর বিষয়টি সাময়িক উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আকাশপথে রপ্তানি কার্যক্রম বাড়াতে বিমানবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কাস্টমস সমস্যা সমাধানের তাগিদ তাদের।

অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যদি আমাদের ব্যবস্থাপনা ভালো হতো। বিমানবন্দরের সক্ষমতা থাকতো। আমাদের বিমানবন্দর ব্যবহার করে এয়ার সার্ভিস দেয়া যেত তাহলে বাণিজ্যের দিক থেকে এগিয়ে যেত।’

তৈরি পোশাক খাতের নানা অস্থিরতার মধ্যে নভেম্বর পর্যন্ত ইতিবাচক ধারায় রয়েছে পোশাক রপ্তানি। গেল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় এসময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ।

ইএ