খাদি কাপড়ের কথা বললেই সবার আগে আসে কুমিল্লার নাম। এই জেলাকে খাদি কাপড় পরিচিত করেছে বিশ্বজুড়ে। শতবছর আগের স্বদেশী পোশাক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা খাদি কাপড়ে চড়েছে রঙ। যা এখন নানা বয়সী মানুষের পছন্দ।
হাতে বোনা মোটা কাপড় ছাড়াও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সব ঋতুতেই এই কাপড়ের কদর বাড়ছে। যাচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
একজন ক্রেতা বলেন, ‘খাদি বলতেই কুমিল্লা, খাদি বলতেই ঐতিহ্য। সবাই চায় কুমিল্লার একটা খাদি কাপড় নিয়ে যাওয়ার জন্য।’
এক সময় খাদি বা খদ্দরের পাঞ্জাবি আর চাদর ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। তবে কালের পরিক্রমায় তৈরি হচ্ছে খাদি শাড়ি, থ্রি পিস, ফতুয়া, শাল, বিছানার চাদর, পর্দাসহ নানা পণ্য। যা নিয়ে কাজ করছেন কুমিল্লার দুই শতাধিক ব্যবসায়ী।
খাদি ঘরের প্রদীপ কুমার রাহা কান্তি বলেন, ‘তাদের চাহিদা যদি আমাদের খাদি কাপড় ফুলফিল করতে পারে। তাহলে তারা কেন আসবে না খাদি কাপড় কিনতে।’
খাদি কটেজের মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আধুনিকতার ছোঁয়ায় কাপড় আগের থেকে কিছুটা চিকন হয়ে আসছে। এখনও এই জিনিসের মোটামুটি ভালো রেসপন্স পাই।’
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ। ভিনদেশি কাপড় বর্জনের ডাকে স্বদেশী পোশাক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করা খাদি এখন বাঙালির ফ্যাশনের অংশ।
তবে শত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় যারা খাদি কাপড় তৈরি করছেন তারা জানান, কাঁচামাল সংকট, দক্ষ কারিগর এবং বিপণনের অভাবে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক কারিগর। স্বাধীনতার পরেও মুরাদনগর, দেবীদ্বার ও চান্দিনার এক হাজারের বেশি পরিবার কাপড় তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এখন আছে মাত্র সাতটি পরিবার।
একজন কারিগর বলেন, ‘জোগানি দিতে পারলে আমার প্রোডাকশন বাড়ত, কিন্তু আমি লোকের অভাবে করতে পারি না। কারণ এসব কাজ কেউ করতে চায় না।’
অন্য একজন কারিগর বলেন, ‘খাদি কাপড় তৈরি করতে তুলার দরকার। তুলা ভালো হলে এ কাপড় ভালো হয়।’
ঐতিহ্য রক্ষায় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে খাদির মান উন্নয়নের পাশাপাশি ক্রেতাদের দেশি পণ্য ব্যবহারের আহ্বান জেলা প্রশাসকের।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিরুল কায়ছার বলেন, ‘আমরা বলি যে দেশীয় পণ্যকে প্রমোট করবো, উদ্বুদ্ধ করবো। কিন্তু আমরা কেনার সময় বিদেশি কাপড় কিনবো। আর সরকার তো বায়ার না যে সমস্ত খাদি কাপড় কিনে সরকার এটা প্রমোট করবে। সেজন্য খাদির কোয়ালিটি বাড়াতে হবে।’
কুমিল্লার খাদিকে জিআই পণ্য স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হলেও তা ঝুলে আছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। এই স্বীকৃতি ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খাদিপাড়া আবারও জমে উঠবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।