শিল্প-কারখানা
অর্থনীতি
0

অর্থ সংকটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তা, ছাঁটাই আতঙ্কে কর্মী

জুলাই-আগষ্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে এখনো অর্থ সংকটে ভুগছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। পাচ্ছেন না কোন নতুন বিনিয়োগকারী। যাদের বিনিয়োগ করার কথা ছিল তারাও এখন বিনিয়োগ করছেন না নতুন করে। আর এতে অনেকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে হওয়ার পরিক্রম। ফলে ছাঁটাইয়ের চিন্তায় কর্মীরা। আর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সংকট নিরসনে দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাইফুল ইসলাম, পেশায় উদ্যোক্তা। নিজ যোগ্যতায় তৈরি করেছেন স্টার্ট আপ কোম্পানি 'টিউটর লাগবে'। ছয় বছর আগে শুরু হওয়া এই স্টার্ট আপ অনেক চড়াই-উতরাই পেড়িয়ে পেতে শুরু করে সাফল্য। সর্বশেষ একটি রিয়েলিটি শো থেকে পায় দুইজন বিনিয়োগকারী। স্বপ্ন ছিল নিজেদের এই ছোট্ট উদ্যোগকে নিয়ে যাবে আরো উপরে। তবে জুলাই-আগষ্টের গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক অস্থিরতায় তার সেই স্বপ্নে গুড়ে বালি।

উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক বড় স্বপ্ন ছিল তবে রাজনৈতিক অস্থিরতায় তা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই জায়গা থেকে স্যালারি দিতে না পাড়ায় অনেক কর্মীকে ছাঁটাই করেছি। স্যালারি দিতে না পারলে রানিং কর্মীকে ধরে রাখা কঠিন।’

শুধু সাইফুল ইসলাম নয়, এ ধরনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও রয়েছে চাকরির অনিশ্চয়তায়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেক বিনিয়োগকারীই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। অনেকে আবার এই মুহূর্তে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নন। এ কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কায় আছেন।

একজন নারী কর্মী বলেন, ‘আমি আমরা চাকরি নিয়ে চিন্তিত কারণ যেখানে আছি সেখানে পরিস্থিতি ভালো না হলে তারা তো আমাকে রাখতে পারবে না।’

একই অবস্থা আরেক ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামের। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বল্পসংখ্যক কর্মীকে বেতন দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই বাকি পড়েছে এক মাসের বেতন। নতুন করেও পাচ্ছেন না কোন বিনিয়োগকারী। সাথে গত দুই মাসে লোকসান গুনেছেন প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। বলছিলেন, কষ্ট হলেও কর্মীদের ছাঁটাই না করার পক্ষে তিনি।

ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘স্যালারি দিতে কষ্ট হচ্ছে কারণ আমাদের মতো কোম্পানিতে যদি একমাসের সেল না থাকে সেখানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাংক ইন্টারেস্ট অনেক বেশি হওয়ায় সেক্ষেত্রে লোন নিতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।’

এদিকে নতুন করে বিনিয়োগকারী না পেলে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অনেককেই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে। বেকার হয়ে পরবে অসংখ্য কর্মী।

কর্মীদের একজন বলেন, ‘পরবর্তীতে মাসে বিজনেস চলবে কিনা আমরা কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছি না।’

এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গণ-আন্দোলনের পর সরকার পতন হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেশে কিছুটা অস্থিরতা দেখা যায়। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সাথে দ্রুত আলোচনা করে কর্মকৌশল নির্ধারণের পরামর্শ এই অর্থনীতিবিদের। বলেন, রাজনৈতিকভাবে দুর্বৃাত্তায়িতদের বাদ দিয়ে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করতে হবে সরকারকে।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে একটা কাজ হতে পারে সেটা ব্যবসায়ীরা যেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই না করতে পারে। পূর্ণ বেতন না দিতে পারলে যদি আংশিক বেতন দিয়ে তাদের কাজগুলো অব্যাহত রাখা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।’

এছাড়াও সংকট নিরসনে ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ারও আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।

ইএ