ভোরের আলো ফুটতেই দলে দলে কর্মস্থলের পথে পোশাক শ্রমিকরা। বেশ কয়েকদিন পর কারখানা খুলে দেয়ায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে। ফলে ঘুরছে কারখানার চাকা। শুরু হয়েছে উৎপাদন কার্যক্রম।
তাই ৫ দিন পর আবার চিরচেনা প্রাণ চঞ্চলতা সাভারের আশুলিয়ার প্রায় ২ হাজার তৈরি পোশাক কারখানায়। দীর্ঘদিন পরে কাজে ফিরে দম ফেলানোর ফুরসত নেই শ্রমিকদের। গত কয়েকদিনের বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাই পোশাক সেলাই থেকে শুরু করে প্যাকেজিং পর্যন্ত সব শাখায় বেড়েছে কাজের চাপ। তবে এখনও ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি সচল না হওয়ায় বিদেশি বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগে কিছুটা বিপাকে পড়তে হচ্ছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। কারখানা মালিকরা বলছেন, কয়েকদিনে এই খাতে ক্ষতি হয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা।
উইন্টার ড্রেস লিমিটেডের জিএম মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'শীতের পোশাকের ফ্যাক্টরিতে সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বরে পিক সময় থাকে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এই পাঁচ দিনে আড়াইলাখ পিচ পোশাক শিপমেন্ট করতে পারিনি।'
মেশিনের শব্দ আর শ্রমিকের ব্যস্ততায় পুরোদমে চলছে চট্টগ্রামের পোশাক কারখানাগুলো। স্বল্প সময়ে কাজ শেষ করে আনতে চলছে তোড়জোড়। চট্টগ্রামের ৬০০ পোশাক কারখানার চিত্রই এখন এমনই। যথাযথ সময়ে পণ্য ডেলিভারি না হলে ক্ষতির মুখে পরবে মালিক পক্ষ। আটকে যেতে পারে বেতনও। তাই স্বাভাবিক পরিবেশে কাজে ফিরতে পেরে খুশি শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘কাজ করতে পেরে এখন আমাদের ভালো লাগছে। এখন ঠিক সময়ে শিপমেন্ট করতে পারবো আর মাস শেষে বেতন পাবো।’
চট্টগ্রামে এখনও সব শিফটে কারখানা সচল রাখা যাচ্ছে না। তবে যেটুকু সময় কারখানা চালু রাখা যাচ্ছে তাতেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন মালিকপক্ষ।
ইন্টারনেট চালু হলেও এখনও গতি কম। ফলে এখন ডিসকাউন্টে পণ্য ছাড়সহ নানানভাবে লোকসান দিয়ে বাজার ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ বলছেন পোষাক মালিকরা।
বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ সভাপতি নারিস উদ্দীন চৌধুরী বলেন, 'এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠা কষ্টকর আর যে বায়ারগুলো অল্টারনেটিভের চিন্তা করেছে তারা তা করে নিয়েছে কারণ তাদের কাছে তো অল্টারনেটিভ রয়েছে।'
পোশাক কারখানাগুলোতে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে গাজীপুরেও। কর্মমুখর প্রতিটি গার্মেন্টস। যদিও নির্ধারিত সময়ে পণ্যের জাহাজিকরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় লোকশানের শঙ্কায় শিল্প মালিকরা। বেশ কয়েকদিন বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় লোকশানের শঙ্কা মাথায় নিয়ে ক্ষতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টায় তারা। কাজে যোগ দিয়ে স্বস্তি ফিরেছে শ্রমিকদের মাঝেও। তবে সঠিক সময়ে বেতন পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
গাজীপুরের পোশাক শ্রমিক বলেন, 'শিপমেন্ট না করতে পারলে তো মালিক বেতন দিবে না। এখন কাজ করতে পারছি শিপমেন্ট হবে। আমরা বেতনও পাবো।'
পরিস্থিতি সামলে উঠে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন সঠিক সময়ে পরিশোধ করার আশ্বাস মালিক পক্ষের।
স্টাইলিশ গার্মেন্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'বৈশ্বিক অর্থনীতি সংকটের কারণে সুদা হার বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছে। এসময় অর্ডার ক্যান্সেল হয় তাহলে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না।'
সাভারে ২ হাজার, চট্টগ্রামে ৬ হাজার ও গাজীপুরে ৩ হাজার তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। যেখানে কাজ করছে ৫৩ লাখ শ্রমিক।