চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূলে রয়েছে ৫০ এর বেশি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। যেখান থেকে প্রতিবছর সরকার রাজস্ব পায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও দেশের ইস্পাত শিল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ কাঁচামালের জোগান দেয় এই শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রি।
এতে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান ২০ হাজার। কিন্তু আগামী বছর বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে বড় এ শিল্প। পরিবেশ রক্ষায় হংকং কনভেনশন এর কারণে গ্রিন শিপ ইয়ার্ডে পরিণত না হওয়া ৪৬ প্রতিষ্ঠান পড়বে বিপাকে। যার প্রভাব পড়তে পারে সমগ্র শিল্পে।
বিএসবিআরএ'র সহ-সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, 'যেসব ইয়ার্ড হংকং কনভেনশনের আদলে উন্নীত হবে শুধুমাত্র তারাই জাহাজ আনতে পারবে। তাই আমাদের ৭০-৮০টা ইয়ার্ড পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।'
বর্তমানে বিশ্বে জাহাজ ভাঙায় প্রথম অবস্থানে বাংলাদেশ। সবশেষ ২০২৩ সালে দেশে জাহাজ ভাঙা হয়েছে ১৭০টি। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারত জাহাজ ভেঙেছে ১৪০টি। তৃতীয় অবস্থানে থাকা তুর্কিয়ে ৪৪টি এবং চতুর্থ অবস্থানে থাকা পাকিস্তান ১৫টি জাহাজ ভেঙেছে। এখনও বিশ্বে প্রায় ১৫ হাজার জাহাজ রিসাইক্লিংয়ের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু গ্রিন শিপ ইয়ার্ড না হলে এ বিপুল জাহাজ আসবে না বাংলাদেশে।
বাংলাদেশে গ্রিন শিপইয়ার্ডে রূপান্তরের সবচেয়ে বড় বাধা মূলধন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে চার মাস বৃষ্টিপাত থাকে। এসময় ইয়ার্ড কর্দমাক্ত থাকে। তাই পুরো ইয়ার্ড কংক্রিট ঢালাই করতে হয়। এছাড়া জাহাজ একটু দূরে থাকলে সেখানে বার্থিং সিস্টেম এবং ভারি ক্রেনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি প্রয়োজন পড়ে। এতে একেকটি শিপইয়ার্ডকে গ্রিন শিপইয়ার্ডে পরিণত করতে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। এ অবস্থায় স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ এবং বিদেশিদের এ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।
শিপ রিসাইক্লিং কনসালটেন্ট মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'দেশের বাইরের যত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, তারা যদি বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগ করে। তবে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হবে।'
২০২৩ সালে বাংলাদেশ ৩২ লাখ ৩২ হাজার টনের জাহাজ ভেঙেছে। একই সময়ে ভারত ভেঙেছে ২৬ লাখ ১০ হাজার টন। পাকিস্তান ভেঙেছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টনের জাহাজ। যা ইস্পাত শিল্পের স্ক্র্যাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের গ্রিন শিপইয়ার্ডে রূপান্তরের অগ্রযাত্রায় সহযাত্রী হতে চায় নরওয়ে।
নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেন বলেন, 'এখানের অনেক কর্মদক্ষতা আমাদের চোখে পড়েছে। এখানে বিপুল সংখ্যক অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত অর্থ উপযুক্ত ব্যক্তির মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে হবে। সেজন্য আমরা সহযোগিতার চেষ্টা করবো।'
২০২৫ সালের ২৬ জুন হংকং কনভেনশন কার্যকর হবে। তবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আরও অন্তত দুবছর সময় বাড়াবার আবেদন করবেন বলে জানান।