ব্যাংকপাড়া
অর্থনীতি
0

টাকা না ছাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছয় ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সহায়তা

অবশেষে টাকা না ছাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যেই সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ৬টি ব্যাংককে দেয়া হয়েছে তারল্য সহায়তা। আজ (বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এছাড়া গ্রাহকের টাকা যে ব্যাংকেই থাকুক; তার সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি। তবে যা ছাপানো হয়েছে তা কয়েকদিনের মধ্যেই তুলে নেয়া হবে। এতে বাজারে ও মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না বলে জানান গভর্নর।

দেশের ব্যাংকিং খাতে আওয়ামী সরকারের ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক ইসলামী ব্যাংক থেকেই এস আলম নামে বেনামে আত্মসাৎ করেছে লাখ কোটি টাকার বেশি। একই সাথে দখল করে বেহাল অবস্থা করেছে আরো ৫ ব্যাংকের। এছাড়া শিকদার পরিবার, নজরুল ইসলাম মজুমদার আর সালমান এফ রহমানের মতো ব্যক্তিদের কারণে ধুকছে আরো বেশ কয়েকটি ব্যাংক।

টাকা নিয়ে আত্মসাৎ আর পাচারের কারণে এখন অর্থ পেতে ভোগান্তিতে আছেন অনেক ব্যাংকের গ্রাহক। বিশেষ করে প্রয়োজনের টাকা তুলতেও কয়েক দফা যেতে হচ্ছে ব্যাংকে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে অর্থ সহায়তা বন্ধ করলে ব্যাংকের এমন প্রকৃত চিত্রই উঠে আসে। পরে টাকা না ছাপিয়ে গ্যারান্টি দিয়ে সবল ব্যাংক থেকে সহায়তা দেয়া শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে সবশেষ ব্যাংকগুলোকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়।

এরপরও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না ব্যাংকগুলো। নতুন করে আমানত আসার পরিমাণ কমে যাওয়ায় গ্রাহকের টাকা দিতেই হিমশিম খাচ্ছে তারা। তাই যে টাকা পেয়েছে তা এতদিন তেমন কাজে লাগেনি বলে জানায় ব্যাংকগুলো।

তাই এবার টাকা না ছাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে ছয়টি ব্যাংককে নতুন করে ছাপিয়ে দেয়া হয়েছে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান গভর্নর।

গভর্নর জানান, টাকা ছাপালেও তা বেশিদিন রাখা হবে না। বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে তা তুলে নেয়া হবে। এতে মূল্যস্ফীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘টাকা ছাপাবো না সেখান থেকে আমি সাময়িকভাবে সরে এসেছি কিন্তু পুরোপুরোভাবে নয়। আমরা এ টাকা আমাদের বন্ড ইস্যু করার মাধ্যমে তুলে ফেলব। আমাদের সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক ভারসাম্যটা ঠিক রাখা, তারল্য ঠিক রাখা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের রাখার জন্য যে প্রচেষ্টা রয়েছে তা থেকে কিন্তু আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি না।’

সেই সাথে টাকা যে ব্যাংকেই থাকুক না কেন; গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘যে তারল্য সাহায্য দেয়া হয়েছে তার ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে গ্রাহকদের থেকে জেনে থাকবেন। আমি আশা করছি ব্যাংকগুলোর ব্রাঞ্চে গেলে দেখবেন গ্রাহকরা টাকা উত্তোলন করতে পারছে।’

এদিন গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন ভারতের রাষ্ট্রদূত। তার সাথে দুদেশের আর্থিক খাত ও লেনদেনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান গভর্নর।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দ্বিপাক্ষিক ফাইন্যান্সিয়াল ইস্যু, সেন্ট্রাল ব্যাংক টু সেন্ট্রাল ব্যাংক ইস্যু, বাংলাদেশের ট্রেড ইস্যু- এছাড়া আমাদের কিছু পেমেন্ট ইস্যু রয়েছে সেগুলো নিয়েই আমরা আলাপ করেছি।’

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ক্ষতির অন্যতম দোষী এস আলম। তাই যারা এ খাতে লুটপাট করেছে তাদের সম্পদ ও শেয়ার ফেরত দেয়া হবে না। সেজন্য এনফোর্সমেন্ট বিভাগসহ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।

এএম