জেলার আশাশুনি উপজেলার বড়দল গ্রামে আদিকাল থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হতো হাতে তৈরি এই মাদুরের মাধ্যমে। তখন এই মাদুর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বড়দল বাজারে গড়ে ওঠে মোকাম। বর্তমানে বড়দল ছাড়াও এই উপজেলার কাঁদাকাটি, খাজরা, প্রতাপনগর, খুলনার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেক পরিবার মাদুর তৈরি করে।
বড়দল বাজারে সপ্তাহের প্রতি রোববার বসে মেলে মাদুরের হাট। এরপর এখান থেকে মাদুর চলে যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। আকার অনুযায়ী প্রতিটি মাদুর বিক্রি হয় ১০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এই মেলে মাদুর স্বাস্থ্যসম্মত ও মানে ভালো হওয়ায় বাজারে এর বেশ চাহিদা আছে।
ক্রেতারা বলেন, 'মাদুর কিনতে আসছি, কারণ প্লাস্টিকের মাদুরের চেয়ে এই মাদুর অনেক ভালো ও আরামদায়ক।'
মাদুর তৈরির মূল উপকরণ 'মেলে ঘাস' একসময় নদী ও খালের পাড়ে এই ঘাস প্রাকৃতিকভাবে জন্মাত। তবে পলি জমে নদী ভরাট ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে এখন এটি ফসলের জমিতে চাষ করতে হয়। ফলে কাঁচামাল সংকট ও কম দামের প্লাস্টিকের পাটি বাজার দখল করায় অধিকাংশ কারিগর এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। যারা এখনো এটি তৈরি করছেন; তারা মূলত পৈত্রিক ব্যবসা আকড়ে ধরে আছেন।
মেলে মাদুর তৈরি করছেন কারিগররা। ছবি: এখন টিভি
মাদুর কারিগররা বলেন, 'দুটো মাদুর তৈরি করে ৬০০ টাকা পাওয়া যায়। এতে মোটামুটি সংসার চলে।'
সংশ্লিষ্টরা বলছেন শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে হলে নতুন করে কারিগর ও উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া নতুন বাজার সৃষ্টি করা গেলে এই মাদুর বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।
বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান জগদীশ চন্দ্র সানা বলেন, 'এই মাদুর আমাদের বড়দলের ঐতিহ্য। গ্রামের খালগুলো খনন করে যদি বৃষ্টির পানি ধরে রাখার যায়; তাহলে চাষ করা সম্ভব হবে।'
সাতক্ষীরা বিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে মাদুর উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার তৈরিতে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারের পাশাপাশি মাদুরের জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে জানান জেলা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন। বলেন, 'অনলাইনে বিপণন করা এবং বিসিকের ই-মার্কেটে তাদের নিবন্ধিত করার জন্য কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এই শিল্পকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য একজন উদ্যোক্তা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে।'
বর্তমানে কত পরিবার সরাসরি এই মাদুর তৈরির সাথে জড়িত আছে তার কোন সঠিক তথ্য নেই সরকারি দপ্তরের কাছে। তবে ২০১৮ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার করা জরিপের তথ্যমতে শুধুমাত্র আশাশুনি উপজেলায় ৬৯০টি পরিবার মাদুর তৈরির উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে এই সংখ্যা আরও কম। আর ব্যবসায়ী ও মাদুরের হাট কর্তৃপক্ষের হিসেবে বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মাদুর বেচাকেনা হয়।