চট্টগ্রাম বন্দরে স্ক্যানার সংকটে ভোগান্তি; বিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারক

চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর | ছবি: এখন টিভি
0

স্ক্যানার সংকটে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি নিতে ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা। সচল ৬টি স্ক্যানারের মধ্যে চালু আছে বর্তমানে দুটি। এতে পণ্য পেতে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারক, গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত স্টোর রেন্ট। আইসিডিগুলোর অভিযোগ, প্রায় সময় স্ক্যানার বিকল থাকায় বন্দর থেকে চাহিদা অনুযায়ী আমদানি পণ্য ডিপোতে নেয়া যাচ্ছে না। যদিও এনবিআরের কেনা নতুন ৪টি স্ক্যানার চালু হলে সংকট থাকবে না বলে প্রত্যাশা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের।

চোরাচালান, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি রোধে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ফটকে কনটেইনার স্ক্যানার বসানো হয় ২০০৯ সালে। বর্তমানে বন্দরের ১২টি গেটের মধ্যে স্ক্যানার আছে মাত্র ৬টিতে। এরমধ্যে জিসিবির–১ নম্বর গেইটের গুরুত্বপূর্ণ স্ক্যানারটি বেশ কিছুদিন ধরেই বিকল। আর সিপিআর গেইটে গেলবছর রপ্তানি কনটেইনারের জন্য স্থাপিত স্ক্যানারটিও চালুর কিছু দিন পর নানা সমস্যায় বন্ধ করে দেয়া হয়। এ অবস্থায় মাত্র চারটি স্ক্যানার সচল থাকায় আমদানি কনটেইনার ডেলিভারি ব্যাহত হচ্ছে। গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত গুদাম ভাড়া।

বিশেষ করে অফ-ডকগামী সব কনটেইনার স্ক্যানিং হওয়ার কারণে বিপাকে আছে বেসরকারি ২১টি কনটেইনার ডিপো। আগে ৩৮ টি পণ্য অফডক থেকে ডেলিভারি দেয়া হলেও বর্তমানে পাঠানো হচ্ছে ৬৫ ধরনের পণ্য। যদিও বাড়েনি স্ক্যানারের সংখ্যা। এতে কনটেইনার ডিপোগুলোর আমদানি পণ্য ডেলিভারিতে উৎপাদনশীলতা কমেছে বলে অভিযোগ তাদের।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘স্ক্যানিং করতে গিয়ে আমাদের একেকটা কনটেইনারের পেছনে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। আমরা চাই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যে সমস্ত আমদানি পণ্য ডিপোতে আসছে এগুলো কিন্তু কাস্টম কর্মকর্তার কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমেই ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। আমরা চাই যদি স্ক্যানিংটা ডিপোগামী কনটেইনারকে না করা হয় তাহলে উৎপাদনশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে।’

চট্টগ্রাম কাস্টম এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘যেখানে এক অফ ডকে আমরা ৩৮টি পণ্য ডেলিভারি নিতাম বা তারও কম পণ্য ডেলিভারি নিতাম, সেটার সময় যে এস্কেলিং মেশিন ছিলো। বর্তমানে আমরা ৬৫ ধরনের পণ্য নিতে গিয়ে আমাদের সেইম এস্কেলিং মেশিন বন্ধ। এস্কেলিং মেশিনের সমস্যার কারণে আমরা পণ্য যথাসময়ে অফ ডকে নিতে পারি না।’

আরও পড়ুন:

সিএন্ডএফ এজেন্টদের অভিযোগ শুধু স্ক্যানার সংকট নয়, রিপোর্টে ক্রটি ও রিপোর্ট পেতে দেরির কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে বন্দরের গেইটগুলোতে যানজট তৈরি হওয়ায় অপারেশনাল কাজও ব্যাহত হচ্ছে। সংকট নিরসনে স্ক্যানিং শাখায় প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগের দাবি তাদের।

চট্টগ্রাম কাস্টম এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘আমরা মনে করি সবসময় যে একটা গাড়ি স্ক্যানিং হয়ে গেলো এটার রিপোর্টটা সঙ্গে সঙ্গে গেটে পাঠিয়ে দেবে। এটা তো অনলাইন যায়, এটা তো আর কাউকে নিয়ে যেতে হচ্ছে না। কিন্তু স্ক্যানারের অপারেটররা বলে একটা কনসাইনমেন্টে সবগুলো কনটেইনার স্ক্যানিং না হওয়া পর্যন্ত আমি দেব না। এতে গাড়িটা গেটের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ফলে বন্দরের ভেতর জ্যামের সৃষ্টি হয়।’

বন্দরের জন্য রাজস্ব বোর্ডের কেনা ৫টি স্ক্যানার ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বন্দরে আসলেও দুই বছরে চালু হয়েছে মাত্র একটি। পুরানো ও বিকল স্ক্যানার প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে জানিয়ে কাস্টম কর্মকর্তারা বলছেন, আরও একটি স্ক্যানার চালু হবে শিগগির। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকী স্ক্যানারগুলো বসলে আর সংকট থাকবে না।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মারুফুর রহমান বলেন, ‘৪টি স্ক্যানার আমাদের বর্তমানে সচল রয়েছে। আমাদের স্ক্যানারের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এরইমধ্যে আমরা এনবিআর থেকে ৫টি স্ক্যানার পেয়েছি। তার মধ্যে দুইটি স্ক্যানার সম্পন্ন হয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে এবং আরেকটিও গত কয়েকদিন আগে আমরা এক্সেপ্টেন্স শেষ করলাম। এখন এটা যেকোনো সময় আমরা সচল করতে পারবো বলে আশা করছি। ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা সবগুলো কনটেইনার ইন্সটলেশন করতে সক্ষম হব। এটা করতে পারলে আমাদের যে কনটেইনার জট স্ক্যানারের কারণে হচ্ছে তা আর থাকবে না।’

মূলত সব ইপিজেড, আইসিডি ও অনচেসিস কনটেইনার ডেলিভারির সময় গেইট স্ক্যানিং করা হয়। প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার কনটেইনার স্ক্যানিং করা হয়।

ইএ