টানা ছুটিতে কনটেইনার জটের শঙ্কায় চট্টগ্রাম বন্দর

আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

ঈদে টানা নয় দিনের সরকারি ছুটিতে কনটেইনার জটের শঙ্কায় আছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বন্দর সচল রাখতে ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যের বাইরে আরো বেশি পণ্য বেসরকারি অফ-ডকে পাঠাতে চায় কর্তৃপক্ষ। আগামী ছয় মাসের জন্য কনটেইনার ডিপো থেকে ডেলিভারির অনুমতি চেয়ে এনবিআরে চিঠি দেয়া হয়েছে। ডিপো সংশ্লিষ্টরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও ব্যবসায়ীরা আইসিডিগুলোর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের হ্যান্ডলিং করা কনটেইনারের ৯৫ শতাংশই এফসিএল কনটেইনার। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশ আমদানি পণ্যবাহী এফসিএল কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে খুলে ডেলিভারি দেয়া হয়। আর ১৭ শতাংশ পণ্য ডেলিভারি দেয়া হয় বেসরকারি কনটেইনার ডিপো থেকে, ২০ শতাংশ সরাসরি চলে যায় শিল্প মালিকের কারখানায়। তিন থেকে চার শতাংশ যায় রেলপথে ।

চট্টগ্রাম বন্দরের দাবি, বিশ্বের কোথাও বন্দর চত্বরে কনটেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারি দেয়ার নজির নেই। এতে বন্দরে কনটেইনার ও গাড়ির জট তৈরি হওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই দীর্ঘদিন ধরে আরো বেশি আমদানি পণ্য অফডক থেকে ডেলিভারি দিতে এনবিআরকে অনুরোধ করে আসছে বন্দর।

এদিকে ঈদে টানা নয় দিনের ছুটিতে কনটেইনার জট এড়াতে আমদানি পণ্যবাহী আরো বেশি এফসিএল কনটেইনার বেসরকারি ডিপো থেকে ডেলিভারি দিতে চায় বন্দর। আগামী ছয় মাসের জন্য আরো বেশি এফসিএল কনটেইনার ডিপোগুলো থেকে ডেলিভারি দিতে অনুমতি চেয়ে এনবিআরে চিঠি দিয়েছে বন্দর।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘১১ দিনের দীর্ঘ ছুটি হলেও আমাদের বন্দর চালু রাখতে হবে। সেজন্য আমরা চাচ্ছি যে এফসিএল কার্গোগুলো বাইরে নেয়ার জন্য। আমরা ইতোমধ্যেই চিঠি লিখেছি এনবিআরকে, যে ছয় মাসের জন্য আমাদেরকে যেন বাইরের ঘাটে রাখার অনুমতি দেয়া হয়।’

যদিও এতে সম্মত নন বন্দর ব্যবহারকারীরা। পোশাক শিল্প মালিকদের অভিযোগ ঈদে বাড়তি রপ্তানি কনটেইনারেরই চাপ সামলাতে পারে না ডিপোগুলো। প্রতিদিনের বিপুল অঙ্কের ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের ডেমারেজ দিতে হয় তাদের।

বিজিএমইএ-এর সাবেক সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘ঈদের সময় এক্সপোর্টের গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে থাকে। জায়গা এবং কনটেইনার স্বল্পতার কারণে সেগুলো ক্লিয়ার করা সম্ভব হয় না।এর জন্য আমরা প্রতিনিয়ত ট্রাক ড্যামারেজ দেই। এর মধ্যে যদি এখন আবার ইম্পোর্ট কার্গোগুলো ঢুকিয়ে দেয়া হয়, তাহলে সেটা বন্দরের জন্য বিপর্যয় নিয়ে আসবে।’

ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, আইসিডিগুলোর চার্জ বন্দর থেকে তিনগুণ বেশি। সেই সঙ্গে রয়েছে যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকট। সক্ষমতা না বাড়িয়ে বেশি আমদানি কনটেইনার ডিপোতে পাঠালে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা।

বাংলাদেশ ফ্রেইটফরওয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খাযরুল আলম সুজন বলেন, ‘বাংলাদেশে যে পরিমাণে পণ্য, সে অনুযায়ী আমাদের ডিপো গড়ে ওঠেনি। সেক্ষেত্রে এতগুলো পণ্য যদি একসাথে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে আমদানিকারকরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’

যদিও ডিপো মালিকদের সংগঠন -বিকডার দাবি, ডিপো থেকে পণ্য ডেলিভারি নিলে বন্দরে কনটেইনার জট কমায় জাহাজের গড়ে অবস্থানকাল কমবে। এতে জাহাজ ভাড়া কমায় আমদানিকারকরা লাভবান হবেন।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোটস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ‘যখনই সব ধরনের এফসিএল কনটেইনার বেসরকারি অফ-ডকগুলো থেকে ডেলিভারি হবে তখনই চট্টগ্রাম বন্দরে যানজট কমে যাবে এবং জাহাজের ফেরত যাওয়ার সময় কমে আসবে।’

৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য বেসরকারি ২১টি কনটেইনার ডিপো থেকে ডেলিভারি দেয়া হয়। বছরে ২৩ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে এসব ডিপো। এর মধ্যে আমদানি কনটেইনার তিন লাখ, রপ্তানি সাত লাখ ও খালি কনটেইনার ১৩ লাখ।

এসএইচ