দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বছরে প্রায় ৬৫ লাখ টন। এরমধ্যে আমদানি করা ১৫ লাখ টন ক্রুড অয়েল বা জ্বালানি তেল রাষ্ট্রীয় তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি পরিশোধন করে। যার পুরোটাই বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে সরবরাহ করতো বাংলার জ্যোতি ও বাংলার সৌরভ নামের দু'টি অয়েল ট্যাংকার।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ও ৫ অক্টোবর পরপর দু'টি অগ্নিদুর্ঘটনায় ৩৮ বছরের পুরানো এ দু'টি জাহাজ ব্যবহারের উপযোগিতা হারালে বিপিসির জ্বালানি তেল খালাসে বিপাকে পড়ে বিএসসি। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্পট টেন্ডারের মাধ্যমে এক মাসের জন্য গ্লোবাল ডিগনিটি নামে একটি জাহাজ চার্টার করা হয়। তবে জাহাজটি শিপ টু শিপ তেল লাইটারিংয়ের যথোপযুক্ত না হওয়ায় তেল খালাসে সময় বেশি নেয়।
এতে প্রতিদিন তেল খালাসের জন্য বিএসসিকে গুণতে হয় প্রায় ২৬ হাজার ডলার। এই প্রেক্ষাপটে আপাতত মার্চ পর্যন্ত জ্বালানি তেল খালাসের জন্য একটি অয়েল ট্যাংকার ভাড়া নিতে দরপত্র আহ্বান করেছে বিএসসি। জাহাজ চার্টার করার ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে নিরাপদে জ্বালানি তেল খালাস এবং লাভ ক্ষতি সবকিছু বিবেচনায় নেয়া হবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নভেম্বর থেকে শুরু হবে চার্টার করা জাহাজের অপারেশন।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, 'বিপিসির টাইম ফ্রেমের সাথে মিল রেখে আমরা এই চার্টারিংয়ের লোকাল পার্টটা করতে থাকবো। এবং আমরা নিঃসন্দেহে চেষ্টা করবো এমন একটি সিস্টেমে যেতে যেন আমরা জাতীয় জ্বালানি সিকিউরিটি এনশিওর করতে পারি। একইসঙ্গে পুরো অপারেশনটা স্মুথ হয়।'
এই প্রসঙ্গে বিএসসির সাবেক ক্যাপ্টেন বলেন, তেল লাইটারিংয়ের জাহাজ ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে জাহাজের তেল পাম্পিংয়ের সক্ষমতা ও ইস্টার্ন রিফাইনারির সক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। বাংলার জ্যোতি ও সৌরভ জাহাজ দু'টি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে কোটি কোটি টাকা অপচয় হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, 'এমন ধরনের জাহাজে চার্টার করা উচিত যেটা আমাদের সিস্টেমের সাথে চলতে পারবে। যে পরিমাণ নিয়ে আসবে সেই পরিমাণ তেল নিয়েই চট্টগ্রাম পোর্টে ঢুকতে হবে। এবং নির্দিষ্ট যে সময় থাকবে সেই সময়ের মধ্যেই সেই তেল খালাস করতে হবে। এবং সেই তেল গ্রহণ করারও ক্যাপাসিটি থাকতে হবে আর সেই ধরনের পাইপিং সিস্টেম থাকতে হবে।'
এদিকে অগ্নির্দুঘটনায় ব্যবহার অনুপযোগী বাংলার সৌরভ ও বাংলার জ্যোতি জাহাজ দু'টি বিক্রি বা বহর থেকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে কনস্ট্রাকটিভ টোটাল লস -সিটিএল সিস্টেমে জাহাজ দু'টি ডিসপোজালে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, 'আমাদের সিটিএলের জন্য অলরেডি প্রসেস চলছে। মন্ত্রণালয়ে শুধু একটা অ্যাপ্রুভালের জন্য পাঠিয়েছি। আমাদের এই প্রসেসেই বিএসসি বেশি লাভবান হবে। আমরা আশা করি যে মন্ত্রণালয় থেকে এভাবে অনুমোদন হবে।'
এক সময় রাষ্ট্রীয় এই জাহাজ কোম্পানির বহরে ৩৮টি জাহাজ থাকলেও বর্তমানে আছে মাত্র পাঁচটি। দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকায় নতুন চারটি জাহাজ চীন থেকে কেনার প্রক্রিয়া নেয়া হয় ছয় বছর আগে। ঋণ চুক্তি হলেই শুরু হবে জাহাজ নির্মাণের প্রক্রিয়া।