কর্মব্যস্ততায় মুখর থাকে যশোরের নওয়াপাড়া নৌবন্দর। নৌপথের সাথে রেল ও সড়ক যোগাযোগের সুবিধার কারণে পণ্য আনা-নেয়ায় ব্যবসায়ীদের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বন্দরটি। এখানে বছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন আমদানি পণ্য খালাস হয়।
সমুদ্র পথে আসা পণ্য লাইটারেজ জাহাজে ভৈরব নদ হয়ে এই বন্দরে খালাস হয়। এছাড়া এখান থেকে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ মিটার দূরত্বে যশোর-খুলনা মহাসড়ক ও রেলপথ। এত সুবিধারও পরও, বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় ব্যবহারকারীরা।
নদের বিভিন্ন পয়েন্টে পলি জমে জেগে উঠেছে চর। নাব্য সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য আমদানি কার্যক্রম। বিঘ্ন ঘটছে নৌযান চলাচলে। এতে বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নৌবন্দর ব্যবহারকারীরা। বলছেন, খননসহ যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে স্থবির হয়ে পড়বে বন্দরকেন্দ্রিক কার্যক্রম।
একজন শ্রমিক বলেন, 'আগে ৪০০ থেকে ৫০০টি জাহাজ আসতো। এখন ২০টি জাহাজও আসে না। জোয়ার ছাড়া আমাদের কাজ করার উপায় নেই। ঘাটে জাহাজ নিয়ে আসলে এখন জাহাজের অর্ধেক থাকে ওপরে।'
নদীর নাব্য সংকটের কারণে বন্দরে জাহাজ তীরে ভিড়তে পারে না। এ কারণে, মাঝ নদী থেকে মালামাল মাথায় করে তীরে উঠানোর সময় অহরহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন এখানকার শ্রমিকরা।
এ বন্দর দিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৮৪টি জাহাজে পণ্য এসেছে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৩১৩ মেট্রিক টন। যা থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। তাই পণ্য পরিবহন ও খালাসে গতি আনতে এবং অবকাঠামো উন্নয়নসহ আধুনিক বন্দরে রূপান্তরের দাবি ব্যবসায়ীদের।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-চেয়ারম্যান শাহাজালাল হোসেন বলেন, 'রেল, সড়ক ও নৌপথের সংযোগস্থল এখানে। উত্তরবঙ্গ ও বরিশাল অঞ্চলের মালামাল আনলোড হয়ে এখান থেকে যায়। দুইটি সমস্যা আমাদের আছে। এগুলো সমাধান হলে ভারত ননেপালেও মালামাল পরিবহণ করা সম্ভব।'
তবে, নদী বন্দরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি নদের নাব্য ফেরাতে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভৈরব নদের খনন কাজ শেষ হয়েছে। আর বন্দরের উন্নয়নে প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৫৪ কোটি টাকার প্রকল্প।
যশোরের নওয়াপাড়া নৌ-বন্দরের সহকারী নৌ ও পরিবহন কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ বলেন, 'এখানে নদীর চ্যানেল খুব সরু। এখানে জেটি জাতীয় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করলে মালামাল ওঠানামার জন্য খুব একটা ফ্রিজিবল হবে না। সেজন্য এখানে একটা বড়ধরনের প্রকল্প বিআইডব্লিউটিএ থেকে প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে। এটা মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আছে।'
এ বন্দরকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে ৫ লাখেরও বেশি মানুষের ভাগ্য। তাই এ বন্দরের উন্নয়নে সমন্বিত এবং সুনির্দিষ্ট দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দাবি ব্যবসায়ীদের।