দেশে চাষ হচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকার বিদেশি ফল

দেশে চাষ হচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকার বিদেশি ফল
দেশে চাষ হচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকার বিদেশি ফল |
0

ডলার সাশ্রয়ে বিদেশি ফল এখন দেশেই চাষ হচ্ছে। লাভ বেশি হওয়ায় বাড়ছে উৎপাদন সক্ষমতাও। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে নানা জাতের বিদেশি ফল। যার বাজারমূল্য প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। দেশে উৎপাদিত কয়েকটি বিদেশি ফল হয়ে উঠছে রপ্তানিযোগ্য।

লাতিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর ফল অ্যাভোকাডো, থাইল্যান্ড ভিয়েতনামের ড্রাগন কিংবা চীনের মালবেরি আবার শীত প্রধান দেশের স্ট্রবেরি এসবই এখন মিলছে বাংলাদেশে। দেশের বিভিন্ন জেলার উর্বরা জমিনে চাষ হচ্ছে এই বিদেশি ফল। দেশের ক্রেতাদের কাছে আম জাম কাঠালের বাইরেও এসব বিদেশি ফলের চাহিদাও বেড়েছে বেশ।

গেল কয়েক বছর আগেও পুরোটাই আমদানি নির্ভর ছিল এই সকল বিদেশি ফল। তখন চড়া দামে মিলতো অভিজাত এলাকার দোকান কিংবা সুপারশপে। তবে, এক সময়ের উচ্চবিত্তের ফল এখন মধ্যবিত্তের নাগালে, এমনকি মিলছে মহল্লার দোকানেও। এর বড় কারণ এসব ফল এখন চাষ হচ্ছে দেশেই।

ক্রেতাদের একজন বলেন, 'দেশে বসেই বাহিরে ফল খেতে পাচ্ছি এখন।'

আরেকজন বলেন, 'আগে বাহিরের থেকে যেসব ফল আসতো তা ফ্রেশ ছিলো না প্রিজারভেটিভ দেয়া ছিল। এখন ফ্রেশ ফল পাচ্ছি।' 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, দেশে বর্তমানে ৭২ রকমের ফলের আবাদ হচ্ছে। যার প্রায় অর্ধেকই বিদেশি। প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে নানা জাতের বিদেশি ফল। এরমধ্যে ৮টি চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। দেশে উৎপাদিত বিদেশি ফলের বাজারমূল্য প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।

চাষ হওয়া অন্য বিদেশি ফলের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাম্বুটান, মেক্সিকোর অ্যাভোকাডো, ভিয়েতনামের ছোট জাতের নারকেল, চীনের মালবেরি, লংগান, পার্সিমন, মেক্সিকোর থাই সফেদা, মধ্যপ্রাচ্যের জাবটিকাবা, সুইট লেমন, মিষ্টি তেঁতুল। 

দেশে বিদেশি ফলের চাষ বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমাতে চায় সরকার। এতে করে বাচানো যাবে ডলার। এনবিআরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৪ হাজার ৮শ' কোটি টাকার বেশি মূল্যের বিদেশি ফল আমদানি হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে খেজুর, আঙুর, কমলা, নাশপাতি ও আপেল।

তবে দেশে এখন পর্যন্ত উৎপাদিত বিদেশি ফলের মধ্যে বাংলাদেশের স্বয়ংসম্পূর্ণ কেবল ড্রাগন ফল চাষে। ২০০৭ সাল বাংলাদেশে প্রথম ড্রাগন ফলের গাছ নিয়ে আসা হয়। এবার সরকারিভাবে ড্রাগন ফল রপ্তানি শুরু হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক ড.মো. মেহেদী মাসুদ বলেন, 'সুইডেনে প্রতি সপ্তাহে ড্রাগন ফল রপ্তানি করা হচ্ছে। সুইডেন থেকে তারা ফিনল্যান্ডে মার্কেটিং করছে। ইউরোপের মার্কেটে আমাদের ড্রাগন ফলের ভালো চাহিদা পাওয়া যাচ্ছে।' 

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, দেশে উৎপাদিত ফলের প্রায় ৪০ শতাংশই বিদেশি। ড্রাগনের পাশাপাশি মাল্টাও রপ্তানির আশা জাগাচ্ছে।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'ড্রাগন ফল আগে ১০০ শতাংশ আমদানি করতে হতো এখন কিন্তু  আমদানি করতে হয়ে না বরং আমরা রপ্তানি করছি।'

তবে বিদেশি ফলের চাহিদার শীর্ষে থাকা খেজুর, নাশপাতি ও আপেল উৎপাদন হয়না দেশে । আঙুর ও কমলা চাষ হলেও মানসম্পন্ন নয়।

এক্ষেত্রে গবেষকরা বলছেন, বিদেশ থেকে চারা বা বীজ আনলেই হবে না, দেশের পরিবেশ ও আবহাওয়া উপযোগী করতে গবেষণা করতে হবে।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এফ এম জামাল উদ্দিন বলেন, 'গবেষণা করে আবহাওয়া উপযোগী চাষাবাদ করতে পারতাম তাহলে সেখানে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকতো।' 

ড্রাগন ফলের রপ্তানির মাধ্যমে এদেশে বিদেশি ফলের চাষাবাদ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

সেজু