একদিকে চালের বিপুল মজুত। অন্যদিকে আসছে বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টির পূর্বাভাসে খরিফ শস্যের মৌসুমে ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি। সবমিলিয়ে চাল রপ্তানিতে সবুজ সংকেতের আশায় ভারতের ব্যবসায়ীরা।
বর্ষা শুরু হতে বাকি আর এক মাস। এর মধ্যেই ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় শুরু হয়েছে খরিফ শস্যের বীজ বপন, যার ৮০ শতাংশই ধান। জুন-জুলাই মাসে দেশজুড়ে বৃষ্টি শুরু হলে ফলনও ভালো হবে বলে প্রত্যাশা চাষীদের।
উপমহাদেশে বর্ষা আর শরৎকালজুড়ে যতো শস্য ফলে, তাই খরিফ শস্য। চলতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ পুরো দুই ঋতুতেই স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টি হবে বলে গেলো মাসে জানায় ভারতের আবহাওয়া বিভাগ। বলা হচ্ছে, এ বছর স্বাভাবিক থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। গেলো বছর স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিতে ভাটা পড়েছিল চাল উৎপাদনে।
দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ভারতে চালের মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরেই রয়েছে। মার্চ পর্যন্ত এক বছরে দেশটিতে চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। তবে আগামী কয়েক মাসে দাম স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি মৌসুমে ভারত সরকার চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে বিগত মৌসুমের চেয়ে সাত শতাংশ কম। তারপরও ১ জুলাই পর্যন্ত ন্যূনতম লক্ষ্যমাত্রা প্রায় চার গুণ চাল এরইমধ্যে সংগ্রহ করে ফেলেছে ফুড করপোরেশন অব ইন্ডিয়া, এফসিআই।
দাম বৃদ্ধির জেরে অভ্যন্তরীণ বাজার স্বাভাবিক রাখতে গেলো বছর আগস্ট থেকে চাল রপ্তানি খাতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করে ভারত সরকার। যার অন্যতম সাদা চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং আধা সেদ্ধ চালে ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ। যদিও বিভিন্ন দেশে খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় সাহায্যের অনুরোধে সাড়া দিয়ে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বেশ কয়েকবার চাল রপ্তানিতে অনুমোদন দিয়েছে নয়া দিল্লি। এছাড়া বর্তমানে টনপ্রতি ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৯৫০ ডলারে বিশ্ববাজারে বাসমতি চাল ছাড়ছে ভারত।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত শতাধিক দেশে রেকর্ড সোয়া দুই কোটি টন চাল রপ্তানি করেছিল। নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০২৩-২৪-এর চলতি অর্থবছরে নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে এ সংখ্যা নেমে এসেছে দেড় কোটি টনে। ২০১২ থেকে বিশ্ববাজারে চাল রপ্তানিতে শীর্ষে ভারত। বিশ্ববাজারে মোট রপ্তানিকৃত চালের ৪০ শতাংশই ভারতের, বছরে আন্তর্জাতিক চালবাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টন।
২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষকদের কাছ থেকে মোট পাঁচ কোটি ৬৯ লাখ টন চাল কিনেছে ভারত সরকার। প্রধানমন্ত্রীর গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা কর্মসূচির আওতায় ৮০ কোটি মানুষকে বছরে চার কোটি টন চাল দরকার হয় এফসিআইয়ের।
রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার সুযোগে বর্তমানে এফসিআইয়ের সংগ্রহে রয়েছে তিন কোটি ১৮ লাখ টনের বেশি চাল, যা লক্ষ্যমাত্রার আড়াই গুণ বেশি। এর বাইরে ছিল 'ভারত চাল' নামে বিশেষ ভর্তুকিতে বিক্রির জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে এফসিআইয়ের দেয়া ১৫ লাখ টন চাল। নির্বাচনের আগে সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ২৯ রুপি দরে চাল ছাড়ে এসব সংস্থা।
রবি শস্যের চলতি মৌসুমে ওড়িষা, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু আর অন্ধ্র প্রদেশের কৃষকদের কাছ থেকে আরও এক কোটি টন চাল সংগ্রহের কথা রয়েছে সংস্থাগুলোর। যাতে আরও বাড়বে নয়া দিল্লির চালের মজুত।