বাংলাদেশ ও কাতারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মূলত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), সার বা পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। এই পণ্যগুলো বাংলাদেশ কাতার থেকে আমদানি করে থাকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিলো প্রায় ৩২ মিলিয়ন ডলার এবং আমদানি করা হয় ২.৩৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
কাতারের ভোক্তা বাজারের আকার ক্ষুদ্র হওয়ায় সেখানে ভোগ্য পণ্য রপ্তানির সুযোগও কম। ফলে বাংলাদেশ তাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ হতে পারে।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাতারের জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে মূলত দেশের বাইরে তাদের যে বিনিয়োগ রয়েছে তার দক্ষতার ওপর। কিভাবে কাতারের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আনা যায়- সেদিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কাতারের আমিরের এ সফরে দুই দেশের মধ্যে ১১ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। এর মধ্যে দ্বৈতকর পরিহার, বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠনসংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। এসব চুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন দেশের ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘কাতার থেকে আমরা মূলত জ্বালানি, সার বা পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করি। সেই তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ খুবই নগন্য। কাতারের ভোক্তা বাজার ছোট। সুতরাং আমরা যেসব ভোগ্যপণ্য তৈরি করি, সেগুলো সেখানে রপ্তানির সুযোগও কম। তবে কনস্ট্রাকশনসহ আরও বেশ কিছু সেবা খাতে আমাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে- যার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘কাতারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ কম থাকলেও সেদেশের বিনিয়োগ নিয়ে আসার সম্ভাবনা অনেক। সেখানকার উদ্যোক্তারা বিদেশে বিনিয়োগ করতে চাই। জ্বালানি ও ব্যাংকিং খাতে তারা বিনিয়োগ করতে পারেন।’
তিনি মনে করেন, আমাদের যে বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল রয়েছে সেখানে কাতারের বিনিয়োগ আনার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক এবং শাসা ডেনিমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, ‘কাতার যদি বাংলাদেশী পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য সেদেশে ব্যবসা করার প্রক্রিয়া সহজ করে, তবে কাতারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা ওভারসিজ অফিস স্থাপনের মাধ্যমে সেখানে সহজে পোশাক রপ্তানি করছে। কাতারে একইরকম সুবিধা পেলে, সেখানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘কাতার এখন আইটি ডেভলপারদের ব্যবসায়িক সুযোগ দিচ্ছে। আমাদের উচিত সেই সুযোগ কাজে লাগানোর। তিনিও আশরাফ আহমেদের মত মনে করেন যে, বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ টানার অনেক সুযোগ রয়েছে।’
শামস মাহমুদ বলেন, ‘সিঙ্গাপুর বাংলাদেশে লজিস্টিকখাতে বিনিয়োগ করেছে। এই খাতে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন। কাতার বিনিয়োগ নিয়ে এখাতে এগিয়ে আসতে পারে। এছাড়া তারা এখানে কোল্ড চেইনখাতে বিনিয়োগ, বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল ডেভলপ ও ঢাকায় কাতার এয়ারলাইন্সের কার্গো হাব করতে পারে।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই বিষয়গুলো উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক আালোচনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।