পোশাক খাতে গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে বিকল্প বাজারে বাড়ছিল রপ্তানি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক মন্দায় ইউরোপ, আমেরিকার বাজার যখন নিম্নমুখী, তখন নতুন দেশ খুঁজতে থাকেন উদ্যাক্তারা। যার সুফলও মেলে। মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক, জাপান, ব্রাজিলসহ অপ্রচলিত নতুন বাজারে ক্রমবর্ধমান রপ্তানি নতুন করে আশা জাগিয়েছে।
বিজিএমইএ'র পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিকল্প বাজারে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৬ হাজার ৩৭৪ মিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যা প্রায় ৩১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৩৭৪ মিলিয়ন ডলারে। আর এ বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রপ্তানি হয়েছে ৬ হাজার ৩০১ মিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
তবে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে রপ্তানিকারকদের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়ালে শুধু পণ্য পরিবহণে সংকট নয়, গ্যাসসহ জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে, বাড়বে উৎপাদন ব্যয়ও। সার্বিক প্রেক্ষাপটে হাতে থাকা অর্ডার ফসকে যেতে পারে বলেও শঙ্কা তাদের।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব বলেন, 'তৈরি পোশাকের যে মন্দা চলছিল, সেটা কাটিয়ে ওঠার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। আমরা বেশ কিছু অর্ডার পেতে শুরু করেছিলাম, ভেবেছিলাম আগামী সিজনে আমরা ভালো অর্ডার পাবো। কিন্তু এ সমস্ত কারণে সেখানে একটা সংকট সৃষ্টি হতে পারে।'
রপ্তানিকারকরা বলছেন, প্রচলিত বাজারে ক্রয়াদেশ ওঠানামা করছে। এই সময়ে নতুন বাজার টিকে থাকার লড়াইকে সহজ করছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে রপ্তানি বাড়ে যথাক্রমে ৩৫ ও ৪৯ শতাংশ। এ দু'টি দেশে গত আট মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪৭৭ মিলয়িন ডলারের পোশাক। ইরান-ইসরাইল সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের সম্ভাবনাময় বাজরসহ তৈরি পোশাক রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে শঙ্কা বিজিএমইএর।
বিজিএমইএ'র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ মো নজরুল ইসলাম বলেন, 'যুদ্ধের কারণে আমাদের কোনো অর্ডার কমে যায় কি না। একদিকে আমরা যে দাম পাচ্ছি, তা সাস্টেইন করার মতো দাম না। তবুও আমরা চেষ্টা করছি শ্রমিক, কর্মচারীদের বেতনগুলো যেন দিতে পারি। ব্যাংকের দেনা যেটা আছে সেটা যেন আমরা কোনোরকমে চালিয়ে রাখতে পারি।'
পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, সরকারি সহায়তায় গত তিন বছর ধরে নতুন নতুন দেশে টানা পোশাক রপ্তানি বাড়লেও এখনও বন্দর ও কাস্টমসে শুল্ক জটিলতায় বিপাকে পড়তে হয় উদ্যোক্তাদের।
বিজিএমইএ'র সহ-সভাপতি মো রাকিবুর আলম চৌধুরী বলেন, 'আমরা টিকে আছি আমাদের মধ্যপ্রাচ্যের ও নতুন মার্কেট যেগুলো সৃষ্টি হয়েছে সেখানে আমাদের গ্রোথটা অনেক ভালো হচ্ছে। ৮ শতাংশের বেশি গ্রোথ সেখানে। এর সক্ষমতা যেভাবে বাড়ছে সেখানে যদি সরকারের লজিস্টিক সাপোর্ট ঠিকমতো পেলে আশা করি ইউরোপ, আমেরিকার সর্টেজ কাভারেজ আমরা এখন থেকে দিতে পারবো।'
২০২২-২৩ অথর্বছরে বাংলাদেশ প্রায় ৪৭ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল। এর মধ্যে নতুন বাজারে রপ্তানি হয় ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পোশাক।