শুকনো মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় ময়মনসিংহের চরাঞ্চলের পলিবাহিত উর্বর মাটিতে যেন সোনা ফলে। টমেটো, ফুলকপি-বাধাকপি, শিম, কাঁচামরিচ, করলা, বেগুনসহ বহুজাতের শাক-সবজির আবাদ হয়েছে চরাঞ্চলে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে টমেটো ও কাঁচামরিচ। ব্রহ্মপুত্রের বাঁকবদলে গড়ে ওঠা অর্ধশত চরে কৃষকের শ্রমে-ঘামে ফুলেফেঁপে উঠে গ্রামীণ অর্থনীতি।
চর লক্ষ্মীপুরের কৃষক সিরাজুল ইসলাম সহযোগীদের নিয়ে নিয়মিত মরিচ খেতের পরিচর্যার কাজ করেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন যেন ফসলটা ভালো হয়।
তবে ফলন ভালো হলেও সার ও কীটনাশকের উচ্চমূল্যে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের দুঃশ্চিন্তা বেড়েছে। কৃষক সিরাজুল এখন টেলিভিশনকে জানান, 'ফসলের ন্যায্যমূল্য তো আমরা পাই না। যে মরিচ আমরা ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি করি। বাজারে দেখা যায় ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। তখন মনে কষ্ট লাগে।'
খেত থেকে মরিচ তুলছেন কৃষক
তবে সুখের খবর হলো পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ঝাল খাবারের তেমন প্রচলন না থাকলেও এখন বাঙালির ঝাল কাঁচালঙ্কা পৌঁছে গেছে ইউরোপের বাজারে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশে রপ্তানি হলেও প্রথমবারের মতো ময়মনসিংহের কাঁচামরিচ যাচ্ছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে।
রপ্তানির কাঁচামরিচ সংগ্রহের জন্য ময়মনসিংহ সদরের বোরোরচরের ২০জন কৃষকের একটি তালিকা তৈরি করেছেন রপ্তানিকারকরা। বাজারমূল্যের চেয়ে ১০ ভাগ বেশি দাম পাবেন তারা। শিউলি ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি কে এম রহমান কামাল বলেন, 'রপ্তানি করার জন্য কাঁচামরিচ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছি। এখানের মরিচ যদি ভালো হয় তাহলে ভবিষ্যতে আমরা ৫ থেকে ১০ টন মরিচ রপ্তানি করতে পারব।'
এনএসবি কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হায়দার ভূঁইয়া বলেন, 'এই মরিচগুলো নিয়ে ৮ থেকে ১০ দিন আমাদের কোন সমস্যা হয় না। ইউরোপের ক্রেতারাও এই মরিচটা পেয়ে খুশি।'
কৃষি বিভাগ বলছে রপ্তানি উপযোগী সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষকদের দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা। সম্প্রতি আরবি ফুডস নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামরিচ রপ্তানির জন্য ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
গাছ থেকে কাঁচামরিচ সংগ্রহ করছেন রপ্তানিকারকরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু বলেন, 'আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে আছেন। তারা প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।'
কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রপ্তানি করা কৃষিপণ্যগুলোর মান শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। সেটা না হলে বাজার হারানোর শঙ্কায় পড়তে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম নাহিদ সাত্তার বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারের ক্রেতারা পণ্যের মান নিয়ে খুব সচেতন। তাই মান নিশ্চিতে আমাদের করণীয় পদক্ষেপগুলো নিতে হবে।'
ময়মনসিংহ জেলায় গত মৌসুমে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার সবজি উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে আবাদ করা ২১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৫২ হাজার টন সবজি উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের। যার বাজারমূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।