দেশের উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত কাঁদামাটির এক ফুট গভীরে বাস করে এক ধরনের পলিকিট। দেখতে অনেকটা কেঁচো আকৃতির এই পলিকিট প্রয়োগে চিংড়ির পোনার মৃত্যুহার কমার পাশাপাশি ডিম উৎপাদন বাড়ে তিনগুণ পর্যন্ত। এছাড়া হ্যাচারিতে খাবার হিসেবে ব্যবহারে কাঁকড়ার উৎপাদনও বাড়ায় এটি।
বিভিন্ন দেশ থেকে এখন চড়া দামে পলিকিট আমদানি করতে হয়। এতে আকাশপথে পরিবহন বাবদ ব্যয় হয় বাড়তি টাকা। এছাড়া দেশে আনার পথে মারা যায় প্রায় অর্ধেক পলিকিট। এতে লোকসান গুণতে হয় ব্যবসায়ীদের।
এমন প্রেক্ষাপটে কক্সবাজারের উখিয়ার রেজুখালের পাশেই এক একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে দেশের প্রথম পলিকিট চাষের বাণিজ্যিক হ্যাচারি। এখানে ৬টি ধাপে সমুদ্রের পানি পরিশোধন, পলিকিটের ডিম সংগ্রহ ও লার্ভা পরিচর্যাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিক্রির উপযোগী করা হয় পলিকিট। এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগে ৬ থেকে ৭ মাস।
পলিকেটের লার্ভা পরিচর্যা।
হ্যাচারির একজন কর্মী বলেন, 'প্রসেসিং করার পর ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা পর অটোমেটিক্যালি ডিম ফুটে যায়। ফুটে যাওয়ার পরে তখন আমরা নিদিষ্ট জায়গায় বড় হওয়ার জন্য ছেড়ে দেই।'
আরেকজন বলেন, 'বাচ্চা থেকে প্রায় ৭ মাস পরে এইগুলো বড় হয়। বড় হয়ে আমরা নিজেরাও খাওয়ায় আর বাহিরেও সেল দেই।'
পলিকিট প্রসেসিং করার পর ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা পর।
দেশিয় চাহিদা পূরণ ও রপ্তানির স্বপ্ন নিয়ে গড়ে ওঠা নিরিবিলি পলিকিট হ্যাচারিতে মজুত রয়েছে প্রায় ৩ হাজার কেজি পলিকিট। প্রতি কেজি উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৩ হাজার টাকা, যা বিক্রি করা হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়। আর থাইল্যান্ড থেকে প্রতি কেজি আমদানিতে খরচ পড়ে ৭ হাজার টাকা।
হ্যাচারির জেনারেল ম্যানেজার সুজন বড়ুয়া বলেন, 'যেখানে লবণ পানির মাছের ব্রিডিং হয় ঐ ব্রিডিং এর ক্ষেত্রে এই পলিকিটটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং এইটার ম্যাচুরিয়েশন ফিডও ব্যবহার করতে পারবেন। মাছকে খাওয়ালে মাছের ডিমের কোয়ালিটি অনেক ভালো হয়।'
কক্সবাজারের নিরিবিলি পলিকিট হ্যাচারির কারিগরি ব্যবস্থাপক মো. রুহুল আমিন বলেন, 'পলিকিট হচ্ছে উচ্চ গুণাগুণসম্পন্ন। এইটার নিউক্লিয়াস ব্রিডিং এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।'
পলিকিটের বাণিজ্যিক চাষে কারিগরি সহযোগিতা করছে সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। ভবিষ্যতে পলিকিট হ্যাচারির পরিধি আরও সম্প্রসারণের আশা মালিকপক্ষের।
প্রায় ৭ মাস বয়সী পলিকিট।
হ্যাচারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসহিন লুৎফুর বলেন, 'আমরা যদি ফুল ক্যাপাসিটিতে যাই তাহলে প্রায় ৩ হাজার কেজির মত পোডাক্টশন দিতে পারবো। আর আমাদের যেহেতু জায়গা আছে আমরা আমাদের ট্যাংকগুলো বাড়াতে পারবো ভবিষ্যতে।'
অ্যাকুরিয়ামে মাছেরও প্রিয় খাবার এই পলিকিট। তাই এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষে নতুন দিনের সূচনা করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: তরিকুল ইসলাম বলেন, পলিকিটের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক। এটি বিভিন্ন চিংড়ি হ্যাচারি, অ্যাগ্রোকালচার কিংবা ফিশারিজ সেক্টরে ব্যবহার করলে লাভবান হওয়া সম্ভব। এর যেহেতু দেশে বাজার আছে। বিদেশেও অবস্থান তৈরি করতে পারলে এটি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের চাহিদা পূরণ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে পলিকিট চাষ।