আগে যেখানে প্রতি মাসে দেড়শ' থেকে ২শ' ইঞ্জিনচালিত বড় নৌযানে করে এই বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া হত, সেখানে গত আড়াই মাসে এসেছে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫টি। বন্দরের প্রধান ফটকে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের জটলা নেই। নাফ নদীতেও নেই পণ্যবোঝাই ট্রলার-জাহাজ।
শ্রমিকেরা বলেন, 'আমাদের এখানে বার্মা যুদ্ধের কারণে কাজ কম হচ্ছে। আমাদের শ্রমিকেরা বসে। এখন কষ্টে চলতেছি।'
আরেক শ্রমিক জানান, 'আমরা তো শ্রমিকের কাজ করি। এখানে কাঠের গাড়ি রশ্মি বাধার কাজ করি। এখন তো কাঠও আসে না, মালামালও কম আসে।'
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত টেকনাফ স্থলবন্দরের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলে মূলত রাখাইন রাজ্য হয়ে। টেকনাফ বন্দরে মিয়ানমার থেকে আসে কাঠ, সুপারি, মাছ, আদা, পেঁয়াজ, শুটকি, ছোলা, ডাল আর আচার। অপরদিকে টেকনাফ থেকে সেখানে যায় প্লাস্টিক সামগ্রী, তৈরি পোশাক, চিপস, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী, ওষুধ, প্রসাধনী ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতায় আগে কিনে রাখা শত শত টন আদা, নারকেল, মাছ ও সুপারিসহ কিছু পণ্য দেশটির আকিয়ব বন্দরে আটকে থাকায় দু:শ্চিন্তা ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীরা বলেন, 'বিভিন্ন আইটেমের মালামাল আমরা কিনি, আবার বিক্রি করি এখানে। পথের মধ্যে, চট্টগ্রাম, চকোরিয়া বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। এখন তো কোনো ধরণের মালামাল আসতেছে না, আগে আসতো মাসে ৩০ দিনের মধ্যে ৬০ টা ট্রলার, এখন একমাসের মধ্যে দুই একটা ট্রলার আসে।'
গত বছরের সেপ্টেম্বরে যেখানে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে প্রায় ১৪৯ কোটি টাকার। সেখানে গত ডিসেম্বর মাসে আমদানি হয়েছে ১২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আমদানি হয়েছে ৩৯ কোটি টাকার পণ্য। এর বিপরীতে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৪ লাখ টাকার। তবে ডিসেম্বরে রপ্তানি হয়নি এক টাকার পণ্যও। আর জানুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৪ লাখ ৪১ হাজার টাকার পণ্য। এমন পরিস্থিতির সমাধানে শিগগিরই কোন আশা দেখছেন না ব্যবসায়ীরা।
টেকনাফ স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, 'ঔপারে অবস্থা ভালো হলে ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হবে আরকি। এটা আমরা সুনিশ্চত করে কিছু বলতে পারছি না।'
প্রায় এক সপ্তাহ পর গত মঙ্গলবার টেকনাফ বন্দরে ভিড়ে মাত্র দুটি নৌযান। যেখানে ছিল ১ হাজার ৫০ বস্তা আদাসহ কিছু নারিকেল, সুপারি ও আচার।
বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম না থাকায় রাজস্ব আদায়েও নেমেছে ভাটা। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে বন্দরের কার্যক্রম।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আসলে আমার মনে হচ্ছে না স্থলবন্দরে মিয়ানমার থেকে কোনো পণ্য রপ্তানি বা আমদানি সম্ভব হবে।'
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে লড়াইয়ের কারণে সীমান্তে স্থলপথের পাশাপাশি নৌপথেও নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ।