চট্টগ্রামে শতাধিক রপ্তানিকারক সবজি রপ্তানি করেন। এর বাইরে ঢাকা, ও সিলেট থেকেও সবজি রপ্তানি করেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ থেকে ৫০ টিরও বেশি পদের সবজি রপ্তানি হয়। যার বেশিরভাগের গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য। এছাড়া ইউরোপের কিছু দেশ, আমেরিকা, যুক্তরাজ্যেও সবজি যাচ্ছে।
সবজি রপ্তানির এ প্রক্রিয়া শুরু হয় চারা রোপন থেকে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে সার, কীটনাশক দিতে হয় । এরপর নির্দিষ্ট আকার ও ওজনের সবজি উত্তোলনের পর বাছাই প্রক্রিয়া চলে। ক্রেতা ও ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী নিখুঁত সবজি বিশ্ববাজারে তুলে দেয়া হয়।
ব্যবসায়ীরা বলেন, 'অনেক সময় ভালো সবজি নাও আসতে পারে। যেগুলো রপ্তানিযোগ্য সেগুলোকে বাছাই করে আমরা প্যাকেটিং করি।'
তবে এ খাতে বাংলাদেশের আশার প্রদীপ এখন নিভু নিভু। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৬৪ মিলিয়ন ডলারের সবজি রপ্তানি করে। পরের অর্থবছর তা কমে দাঁড়ায় ১১৮ মিলিয়ন ডলারে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে রপ্তানি হয় ৯৯ মিলিয়ন ডলারের সবজি। যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। আর সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সবজি রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ৩৬ মিলিয়ন ডলার কমে যায়, ৬১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায় রপ্তানি আয়।

গেল চার বছরে বাংলাদেশের সবজি রপ্তানির তথ্য
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবহন ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না বাংলাদেশ। রপ্তানিকারক অন্যান্য দেশ বাংলাদেশের জায়গা দখল করছে। এ তালিকায় আছে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভিয়েতনাম।
চট্টগ্রাম ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব রানা বলেন, 'আমাদের দেশ থেকে এক কেজি পরিবহন ভাড়া যদি এক ডলার হয়, তাহলে সেটা বোম্বেতে (মুম্বাই) দেখা যায় ৬০ থেকে ৭০ সেন্ট এবং ইসলামাবাদে আরও কম। ঐ সমস্ত দেশগুলোতে সরকারি সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি। আমাদের সুযোগ-সুবিধা পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেক কম।'
এছাড়া অপর্যাপ্ত ফ্লাইট, কেন্দ্রীয় প্যাকিং সেন্টার না থাকাসহ নানা সমস্যায় এ খাত জর্জরিত। এছাড়া দেশিয় বাজারে সবজির বাড়তি দামের কারণে সংগ্রহ করতেই খরচের বড় অংশ চলে যাচ্ছে। সাথে কাস্টমসের নানা হয়রানির অভিযোগও আছে ব্যবসায়ীদের।
ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফোরকান রুবেল বলেন, 'কাস্টমসের কিছু নিয়ম-নীতি অনুসারে নতুন কেউ আসলে তো রপ্তানিই করতে পারবে না। সেগুলোকে আরও সহজীকরণ করতে হবে।'
প্রায় ৪০ টির বেশি দেশে বাংলাদেশের সবজি রপ্তানি হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৯০ লাখ প্রবাসী বড় ক্রেতা । এরমধ্যে গেল অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি সবজি রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাজ্যে। সেখানে ১ কোটি ২৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এরপরেই আছে যথাক্রমে আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েতে।

দেশের সবজি রপ্তানি দেশগুলোর একাংশ
তবে অর্গানিক পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা গেলে রপ্তানির বাজার আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা রপ্তানিকারকদের।
ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব রানা আরও বলেন, 'এই সবজি এবং ফল উৎপাদনের দিকে সরকার যদি একটু নজর দেয় তাহলে আমরা ইউরোপের বাজারও ধরতে পারবো বলে আশা করি। তখন কিন্তু আমরা বিলিয়ন ডলারের বাজার অর্জন করতে পারবো।'
সাধারণ সম্পাদক মো. ফোরকান রুবেল বলেন, 'বাংলাদেশের কৃষকরা রপ্তানিযোগ্য গুণাগুণ কেমন হবে সেটা জানে না। এটার উপর অনেক জোর দিতে হবে।'
বর্তমানে সবজি রপ্তানিতে ২০ শতাংশ হারে রপ্তানিকারকরা প্রণোদনা পান। উৎপাদন খরচ না কমলে বিশ্ববাজারে টিকে থাকা বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।