পেইজে যে ড্রেসটি দেখে অর্ডার করেছেন ক্রেতা, হাতে পেয়েছেন কপি প্রোডাক্ট। যার ডিজাইন এক হলেও কাপড়ের মান নিয়ে আছে প্রশ্ন। ফেরত দেয়ার জন্য মেসেজ বা কল করেও মেলেনি উত্তর। এমন পরিস্থিতিতে পেইজে দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী খুঁজেও মেলেনি দোকান। অর্ডার করা ৮টি ড্রেস নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
ক্রেতা বলেন, ‘রাস্তাতে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা করে যে পোশাক বিক্রি করে সেগুলো পাঠিয়ে দিয়েছে। অথচ তারা ফেসবুকে আমাদেরকে কত দামি হিসাবে দেখিয়েছে। তাদেরকে কল দিচ্ছি তারা ব্লক করে দিচ্ছে। দোকান পাচ্ছি না কিন্তু দোকানের নাম্বার আছে।’
অনলাইনে অর্ডার করে নানা ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন গ্রাহক। ঈদে অনলাইনে অর্ডার বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ে প্রতারণার মাত্রাও। আর বেশি প্রতারণা ঘটছে ফেসবুকভিত্তিক পেইজের মাধ্যমে। আছে রিটার্ন পলিসির নানা বিড়ম্বনা।
বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘অর্জিনাল বলে তারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে কিন্তু তারা কাস্টমারকে একই রকমের পণ্য দিচ্ছে না। হ্যাঁ একদল প্রতারক চক্র আছে যেটা অনলাইনে হয়।’
বিক্রেতারা বলছেন, প্রতারণার মাত্রা কমিয়ে আনতে তারা চেষ্টা করলেও কমছেনা। এতে বিপাকে পড়ছেন যারা সৎ ব্যবসায়ীরা।
তবে এত কিছুর পরও অনলাইনে কেনাকাটা কমেনি। এই যেমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আনিকা তাবাসসুম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অফিসেই কাটান। শপিংয়ে যাওয়ার ফুরসত নেই, তাই ভরসা অনলাইন শপিং।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু অনলাইনে সবকিছু পাওয়া যায়। তাই আমরা একটা ক্লিকের মাধ্যমে অর্ডার প্লেস করতে পারি। আমার পরিবারের বেশিরভাগই অনলাইনে কেনাকাটা করে। আমিও এবার বেশিরভাগ পণ্য অনলাইনে অর্ডার করেছি।’
এই ঈদে ফেসবুক পেইজগুলোও বেশ ভালো ব্যবসা করছে। মূলত মার্কেটের ভিড় এড়াতে ও সুন্দর পণ্য হাতের নাগালে পেতে অনেকেই অর্ডার করেন ফেসবুকভিত্তিক পেইজে। তবে এবারের ঈদে বেচাবিক্রি নিয়ে পাওয়া গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘অনেক চাহিদা রয়েছে কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। অলরেডি অনেক পণ্য স্টক আউট হয়ে গিয়েছে।’
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইক্যাব বলছে, দিনে প্রায় ৭ লাখের বেশি ক্রয়াদেশ আসে অনলাইন শপিংয়ে। ঈদ এলে তা দাঁড়ায় ৮ থেকে ১০ লাখে। আর এর পেছনে মূলত কাজ করে নানা প্রকার ছাড়। তবে এসবের মাঝে প্রতারণা হলে কি ব্যবস্থা নেয় দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো?
দারাজ চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস রুশো বলেন, ‘আমাদের যদি কোনো অভিযোগ আসে সেটা যদি সঠিক হয় তাহলে আমরা সাথে সাথে তাদেরকে রিফান্ড করে দেই। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা সেলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’
পণ্য কেনাবেচায় রিফান্ড ও রিটার্ন পলিসি মেনে চলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে, এর সময়সীমা ৩০ দিন পর্যন্ত করার দাবি গ্রাহকদের। আর পণ্য যা দেখানো হচ্ছে তাই গ্রাহককে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার পরামর্শ বেসিসের সাবেক সভাপতির।
বেসিস সাবেক সভাপতি আলমাস কবির বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে যেখানে নো প্রশ্ন আস্ক রিটার্ন পলিসি থাকে। ৩০ দিনের বেশি সময় থাকে। রাতারাতি বড়লোক হবো কাস্টমারকে ঠকিয়ে এইটা করা যাবে না।’
গত বছর ঈদুল ফিতরে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি বিক্রি হয়েছে অনলাইনে। এবারও সেই লক্ষ্য ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।