চামচারা দেশকে লুটপাটতন্ত্র ও চোরতন্ত্রতে পরিণত করেছে: ড. দেবপ্রিয়

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য | ছবি: সংগৃহীত
1

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, চামচারা দেশকে লুটপাটতন্ত্র ও চোরতন্ত্রতে পরিণত করেছে। দেশে ‘চামচা পুঁজিবাদী’ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পুঁজিবাদে কিছু চামচা তৈরি হয়। এই চামচারা দেশকে লুটপাটতন্ত্র ও চোরতন্ত্রতে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রের পুরো কাঠামোকে তারা এক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে। তারা সবসময়ই সংস্কারবিরোধী।’

আজ (বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর) সিলেটে নাগরিক প্লাটফর্মে প্রাক-নির্বাচনী উদ্যোগ আয়োজিত আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সভার শুরুতে মূল প্রবন্ধে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘অতীতে এদেশে কেবল দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। স্কুল-কলেজের কেবল ইমরাত হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মান বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দেশে একটি গোষ্ঠি গড়ে উঠেছিলো যা দৃশ্যমান বিভিন্ন প্রকল্প নিতে সাহায্য করেছিলো।’

তিনি মনে করেন, বর্তমান সরকারের সংস্কার উদ্যোগ ধরে রাখতে রাজনৈতিক নতুন সরকারের উদ্যোগ থাকা জরুরি। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে ও বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের জায়গাতে নিয়ে যেতে হলে এই সংস্কারগুলো অপরিহার্য বলেও জানান তিনি।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা মনে করি, আগামী দিনে রাজনৈতিক ইশতেহারে এসব প্রতিশ্রুতিকে স্থান দিতে হবে। নতুন সরকার আসলে এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।’

এই অর্থনীতিবিদ জানান, রাজনীতিবিদরা এবার নাগরিকদের মুখোমুখি হয়ে আগের ব্যর্থতার স্বীকৃতি দিয়েছেন, এটিই নাগরিক রাজনীতির পরিপক্বতার লক্ষণ।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমরা চাই, তারা (রাজনীতিবিদরা) জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করবেন। এই জন্য ইশতেহার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই সরকার কিছু কাজ করেছে, কিছু করতে পারেনি। এখন যে সময়টুকু আছে, তাদের বলা উচিত “আমরা চলে যাওয়ার আগে কী-কী করে যাব”— সেই স্বচ্ছতাটাই আমরা প্রস্তাব করছি। দেশ থাকবে, জাতি থাকবে, আমরা চাই সংস্কারও অব্যাহত থাকুক।’

প্রাক-নির্বাচনি আঞ্চলিক পরামর্শ সভার মুক্ত আলোচনা পর্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা নিজেরদের মতামত তুলে ধরেন।

আরও পড়ুন:

সিপিডির অভিজ্ঞ এ ফেলো বলেন, ‘সংস্কার প্রণয়ন করা যত সহজ বাস্তবায়ন করা তত সহজ নয়। আগামী দিনে যারা দেশ পরিচালনা করবেন তারা এ ব্যাপারে আগ্রহী হতে হবে।’ 

তিনি বলেন, এখনকার সরকার অন্তবর্তীকালীন, কিন্তু সময়টা রূপান্তরকালীন। এই রূপান্তরের পথে আমাদের এগোতে হবে।

আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অতীতের রাজনৈতিক দলগুলো অনেক আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু আমরা তার বাস্তবায়ন পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবর্তনের আশা ফুরিয়ে যায়নি। আমাদের ভবিষ্যৎ অতীতের মতো হবে না। গত বছরের জুলাই-আগস্টে আমরা একটা বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এসেছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আজকের সবার মতামত নিয়ে আমরা একটা নাগরিক ম্যানিফেস্টো তৈরি করব।’

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রাক-নির্বাচনী উদ্যোগ হিসেবে আয়োজিত আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় আগামীর নির্বাচিত সরকারের প্রতি সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার পাশাপাশি সিলেটের উন্নয়নের বিষয়ও উঠে এসেছে।

তারা দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত সিলেটের উন্নয়নে আগামীর সরকারকে গুরুত্বারোপ বিষয়ের পাশাপাশি এ অঞ্চলের বন্যা সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যার বাস্তব সমাধানে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার দাবিও জানান।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

সভায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরা আগামীর নির্বাচিত সরকারের উদ্দেশে নাগরিক ইশতেহার প্রণয়ণে ন্যায্য, সমতাভিত্তিক, জবাবদিহিতাপূর্ণ বাংলাদেশের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় কর্মসূচির প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

এসএইচ