বিনিয়োগ সম্মেলনের পরও কি বাংলাদেশের প্রাপ্তির খাতা শূন্য?

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের হার ক্রমান্বয়ে কমছে
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের হার ক্রমান্বয়ে কমছে | ছবি: এখন টিভি
0

বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে ৪২টি দেশের ৬'শর বেশির বিনিয়োগকারীরা অংশ নিলেও প্রাপ্তির খাতা কি শূন্যই থেকে গেল? হিসাব বলছে, ক্রমান্বয়ে দেশে কমেছে এফডিআই। সম্মেলনে তাৎক্ষণিক বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য না হলেও এ আয়োজনকে ইতিবাচক দেখছেন ব্যবসায়ীরা। বলছেন, দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা সমস্যা সমাধান না হলে বিনিয়োগের সুফল আসবে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দৃশ্যমান সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বিডার ওয়ান স্টপ সেবা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে পারলেই বিদেশি বিনিয়োগের হাবে পরিণত হবে বাংলাদেশ।

দেশের ইতিহাসে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন। ৪২টি দেশের ৬'শর বেশি বিনিয়োগকারীরা এতে অংশ নিলেও কি পেল বাংলাদেশ? প্রাপ্তির খাতায় কি কিছু যোগ হলো নাকি শূন্যই রয়ে গেল?

সে প্রশ্নে যখন ঘুরপাক চলছে, তখন বাংলাদেশের বিনিয়োগ সূচকে চোখ বোলানো যাক। গেল তিন অর্থবছরের হিসাব বলছে, ক্রমান্বয়ে দেশে কমেছে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এফডিআই কমে সাড়ে ৫ শতাংশ। পরের বছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ হার কমে আরও ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। সবশেষ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে কমেছে ৭১ শতাংশ।

এমন পরিস্থিতিতে টনক নড়ে অন্তর্বর্তী সরকারের। আয়োজন করে বিনিয়োগ সম্মেলনের। প্রথম দিনেই নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৪টি বড় তহবিল গঠনের ঘোষণা আসে বিনিয়োগ সম্মেলন থেকে। যেখানে ১০ লাখ ডলারের তহবিল ঘোষণা দেয় ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস।

তাৎক্ষণিক বিনিয়োগ নয়, এফডিআই আকর্ষণের মাধ্যম হিসেবে দেখা এ সম্মেলনে স্যামসাং, টয়োটার পাশাপাশি অংশ নেয় আলিবাবার মতো কোম্পানি। যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ অর্ধশত দেশের বিনিয়োগকারীদের নিয়ে এ আয়োজন ইতিবাচক হলেও দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা সমস্যা সমাধান না হলে বিনিয়োগ বাড়বে না বলে মত ব্যবসায়ীদের।

সম্মেলনের সফলতা বলতে কি শুধু ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ? জিডিপির তুলনায় এফডিআইয়ের পরিমাণ যেখানে ১ শতাংশেরও কম সেখানে এ অঙ্কের হিসাবে নগণ্য হলেও সম্মেলনে যেসব চুক্তি হয়েছে তা উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। নাসা, আইএলও, ইন্ডিটেক্স, ডিপি ওয়ার্ল্ডের চুক্তি অন্যতম। ৩টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন বিনিয়োগকারীদের যেমন উৎসাহ যুগিয়েছে, বিডার ১০টি এসইজেড তৈরির উদ্যোগ যেমন সাড়া ফেলেছে তেমনি দেশি বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধানের কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা।

দৃশ্যমান চুক্তির বাইরে বিনিয়োগের খাতাও হয়েছে ভারী। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় প্রায় ৮০০ একর জমিতে জি-টু-জি ভিত্তিতে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে ৪ হাজার ৬৫ কোটি টাকার প্রকল্প, সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে সুইডিশ কোম্পানি ইচঅ্যান্ডএমের সাথে প্রাণ-আরএফএলের চুক্তি, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ১শ' কোটি ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতিসহ তিন হাজার ১০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের ঘোষণা ইতিবাচক। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও দৃশ্যমান সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বিডার ওয়ান স্টপ সেবা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে পারলেই বিদেশি বিনিয়োগের হাবে পরিণত হবে বাংলাদেশ বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেসব চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন সেদিকে নজর দেয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এএইচ