এখন জনপদে
অর্থনীতি
0

বছর না ঘুরতেই স্থবির রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর

৫৯ বছর পর চালু হয়ে, বছর না ঘুরতেই স্থবির হয়ে পড়েছে রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর। স্বল্প মূল্যে পণ্য আমদানি ও পরিবহন খরচ কম হওয়ায় দ্রুত এ বন্দরে গতি ফিরবে প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও কাস্টমের দাবি অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ করতেও প্রস্তুত উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবেই স্থবির হয়েছে বন্দরটি। তবে, কিছুটা সময়ক্ষেপণ হলেও বন্দরটি নিয়ে আশাবাদী বিআইডব্লিউটিএ।

সাজসজ্জায় রঙ্গিন রাজশাহীর সুতলাতগঞ্জ নৌবন্দরের এ ছবি গেল বছর ১২ ফেব্রুয়ারির। বছর না ঘুরতেই সে বন্দর অনুজ্জ্বল, কর্মহীন- পড়ে আছে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায়।

অথচ ৫৯ বছর পর ২০২৪ সালে যখন চালু হয়, তার পর থেকে পরীক্ষামূলক ৫টি নৌযানে আমদানি-রপ্তানি হয়েছে পাথর ও গার্মেন্টস ঝুট। ব্যবসায়ী নেতাদের দাবি, অন্যান্য বন্দরের তুলনায় স্বল্পমূল্যে পণ্য আমদানি ও পরিবহন খরচে সাশ্রয় করতে পেরেছেন তারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি করতে পারলে আমাদের ক্যারিং খরচ প্রায় ২০-২৫ শতাংশ কম পড়বে। একসাথে আমাদের অনেকগুলো পণ্য আসবে।’

উদ্বোধনের পর চার মাস আমদানি-রপ্তানির পরীক্ষামূলক পর্যায় শেষ হলে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ বন্দর নিয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, পরে পণ্য পরিবহনে অবকাঠামো সমস্যা সামনে আনে কাস্টম। বন্ধ করা হয় আমদানি রপ্তানির অনুমতি।

তাতে গেল ১৯ ডিসেম্বর নৌবন্দরটি পরিদর্শন করে রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমসহ বন্দর পরিচালনার একাধিক প্রতিনিধি। তখনও সামনে আসে বন্দরের নিজস্ব অবকাঠামো গড়ার প্রসঙ্গটি। তবে দেশের অন্যান্য নৌবন্দরে এমন নজির নেই বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

পণ্য আমদানিকারক ও সরবরাহকারী মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘তারা একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছে নিজস্ব অবকাঠামো থাকতে হবে। অবকাঠামো না থাকার কারণে তারা অনুমতি দিচ্ছে না। অথচ এ বন্দরের একটা সুন্দর ভবিষ্যত আছে।’

রাজস্ববোর্ড ও কাস্টম কর্তৃপক্ষের শর্তে উদ্যোক্তারা অবকাঠামো উন্নয়ন করতে চাইলেও প্রতিষ্ঠানটি কোনো ধরনের সাড়া দিচ্ছেনা দাবি ব্যবসায়ীদের। এ নিয়ে ক্যামেরায় কথাও বলেনি কাস্টমের কোনো কর্মকর্তা।

মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘কাস্টমের কাছে আমরা দেন দরবার করছি। ওনারা এক জায়গায় অনড় হয়ে আছেন, আমাদের অবকাঠামো দেন। ব্যক্তিগতভাবে যদি আমি অবকাঠামো বানাই তাহলে ধরেন ৫ কোটি টাকা খরচ করব। খরচ করার পর আমাকে পারমিশন দিল না। তাহলে তখন এ অব্কাঠামো আমি কি করব? তখন তো সেটা ৩০ লাখ টাকায় ভাঙারিতে বিক্রি করতে হবে।’

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিঙ্কু বলেন, কি কারণে এখনো আলোর মুখ দেখছে না, আমরা কিন্তু রিপ্লে কিছু পাই নাই। এটা আমাদের কাছে সদিচ্ছার অভাব মনে হয়েছে। কারণ ভৌগোলিকভাবে দেশের সবচেয়ে নিকটবর্তী বন্দর হচ্ছে সুলতানগঞ্জ টু মায়া।’

একইসাথে ব্যবসায়ী মহলে গুঞ্জন আছে, নৌবন্দরটি চালু হলে, নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সোনা মসজিদ স্থলবন্দর পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের ওপর।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া বন্দরের দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। বছরের সব সময় এ নৌপথে পানি থাকলেও পণ্যবাহী বাল্ক বা লাইটার চলাচলে নদীর ড্রেজিংয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘নদীর পানির যে অবস্থা প্রায় ১৮-২০ কিলোমিটার চর পড়ে যাচ্ছে। এটা ড্রেজিং করা দরকার, সে ড্রেজিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয় নি।’

বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘টেন্ডার করে নদীর নাব্যতার সমাধান করা এটা একটু সময় সাপেক্ষ। কিন্তু সরকার যেহেতু এটাকে নদীবন্দর ঘোষণা করেছে এটা অকার্যকর হওয়ার সুযোগ নেই।’

সুলতানগঞ্জ-মায়া পোর্ট অব কল বন্দরটি দিয়ে প্রাথমিকভাবে কয়লা ও পাথরের চিপস আমদানির অনুমতি রয়েছে, যাতে প্রতিটনে ব্যবসায়ীদের সাশ্রয় হবে ১০ ডলারের বেশি।

গেজেট অনুযায়ী এ নৌবন্দরে আসা মালবাহী লাইটার, নদীর ভাটিতে ২০ কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে ভিড়তে পারবে রাজশাহী নগরীর পাশেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন তাতে সেখানে থাকা বহুমুখী সড়ক ব্যবহারে আমদানি করা পণ্যের পরিবহন আরো সহজ হবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বন্ধর আমদানি রপ্তানির অনুমতি পাক, প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।

এএইচ