তথ্য মতে, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির ঘটনাটি ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে। বিষয়টি বিএসইসির নজরে আসলে ১৫ জুন ঢাকা স্টক স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন সংক্রান্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে ডিএসই এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করে।
তদন্ত প্রতিবেদনে, রোকসানা আমজাদ ও তার সহযোগীরা ওই সময়ে কারসাজির মাধ্যমে গ্লোবার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন করে মোট ১ কোটি ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯ টাকা অর্জিত মুনাফা তুলে নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের শুনানিতে তলব করে বিএসইসি। শুনানি কার্যক্রমে অভিযুক্তদের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য মনে না হওয়ায় কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসইসি।
বিগত সরকারের আমলে শেয়ার কারসাজির অভিযোগে আমজাদ হোসেন ফকির, রোকসানা আমজাদ ও তার সহযোগীদের নাম উঠে এলেও কারো বিরুদ্ধে তেমন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন আমজাদ হোসেন ফকির, রোকসানা আমজাদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
রোকসানা আমজাদ এবং তার সহযোগীদের উপর্যুক্ত কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কমিশনের বিবেচনায়, সিকিউরিটিজ আইন ও বিধি-বিধান পরিপালনে আলোচ্য ব্যর্থতার জন্য, পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং জনস্বার্থে রোকসানা আমজাদ এবং তার সহযোগীদেরকে জরিমানা করা প্রয়োজন ও সমীচীন।
অতএব, কমিশন উল্লিখিত বিষয় বিবেনাপূর্বক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রোকসানা আমজাদ এবং তার সহযোগীদেরকে ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ধার্য করল।
এ আদেশের জারি করার ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুকূলে ইস্যুকৃত ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা প্রদান করতে হবে। অন্যথায় সিকিউরিটিজ আইন মোতাবেক পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি সানলাইফ সিকিউরিটিজ, এনএলআই সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং এনসিসিবি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আমজাদ হোসেন ফকির ও তার সহযোগী (রোকসানা আমজাদ) ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সময়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সে ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৩৪০টি শেয়ার কিনেছেন। আর ওই সময়ের মধ্যে তাদের হাতে থাকা মোট ৪২ লাখ ৪০ হাজার ৩৫টি শেয়ার বিক্রি করেছেন।
কারসাজির ওই সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের মোট লেনদেনের মাধ্যমে তারা সম্মিলিতভাবে ২.৩৪ শতাংশ লেনদেন করেছেন। এ লেনদেনের মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ার কেনা-বেচা করে তারা ১ কোটি ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯ টাকা বা ৫৮.৩৩ শতাংশ অর্জিত মুনাফা তুলে নিয়েছেন, যা সিকিউরিটিজ আইন পরিপন্থি নয়। আর ওই সময়ে চক্রটির অনর্জিত মুনাফা ছিল ২ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৩৫৩ টাকা।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭- এ উল্লেখ রয়েছে, 'কোনও ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো শেয়ার বিক্রি বা ক্রয় করতে প্ররোচিত, প্রত্যাখ্যান, প্রভাব, প্রতিরোধ বা কোনো উপায়ে তার সুবিধাকে প্রভাবিত বা পরিবর্তন করতে পারবে না।'
অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫)- এ উল্লেখ রয়েছে, 'প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যেকোনো শেয়ারের একটি সিরিজ লেনদেন প্রভাবিত করে তাতে সক্রিয় ভূমিকা তৈরি করে অথবা অন্যের দ্বারা শেয়ারটি ক্রয়ে প্ররোচিত করার জন্য মূল্য বৃদ্ধি করা বা অন্যদের দ্বারা এটির বিক্রয়ে প্ররোচিত করা র জন্য মূল্য হ্রাস করা যাবে না।'
তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, রোকসানা আমজাদ এবং তার সহযোগী (আমজাদ হোসেন ফকির) গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারগুলিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে লেনদেনের একটি সিরিজ লেনদেন করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) লঙ্ঘন করেছেন।
এদিকে বিএসইসির শুনানিতে রোকসানা আমজাদ ও আমজাদ হোসেন ফকির দুইজনই পুঁজিবাজারে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানান। খণ্ডকালীন বিনিয়োগকারী হিসেবে তারা কমিশনের সমস্ত আইন, বিধি, প্রবিধান এবং নির্দেশনা মেনে বিনিয়োগ করেছেন।
রোকসানা আমজাদের অ্যাকাউন্টটি স্বামী আমজাদ হোসেন ফকির পরিচালনা করেছেন। তার একটি একক এবং ২টি যৌথ বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আর আমজাদ হোসেন ফকিরের ৪টি বিও অ্যাকাউন্ট (একক এবং যৌথ) রয়েছে। তারা দুইজনেই দুর্ভাগ্যবশত, কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনে মোট রিয়েলাইজড গেইন (মুনাফা) কত হচ্ছিল তা বুঝতে পারিনি। এ জন্য ভবিষ্যতে, আরও সতর্ক থাকবেন এবং এ ধরনের ভুল আর পুনরাবৃত্তি হবে না বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এখন টিভিকে বলেন, অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত করে গ্লোবাল ইন্সুরেন্সের শেয়ার কারসাজির প্রমাণ পাওয়া গেছে। যে কারণে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ তাদেরকে আইন অনুযায়ী জরিমানা করেছে।