অর্থনীতি
0

পণ্য পরিবহনে বৈষম্যের শিকার চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা

বাণিজ্যিক রাজধানীর তকমা দেয়া হলেও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আজ (শনিবার, ১২ অক্টোবর) এমন অভিযোগ করে সমাধান চেয়েছেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে অনুদান প্রদানকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের কাছে এই দাবি জানান তারা। চট্টগ্রামে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে ব্যবসায়ীরা বলেন, 'ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেলে পণ্য পরিবহনে বৈষম্যের কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না তারা।' সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিলে সরকার সমস্যা সমাধানে কাজ করবে বলে আশ্বস্ত করেন উপদেষ্টা।

এক সময় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ দেশের ভোগ্যপণ্যের ৮০ শতাংশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতো। চাক্তাই খাতুনগঞ্জে ভিড়তো মিয়ানমারসহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা সওদাগরের জাহাজ।

কালের বির্বতনে জৌলুস হারিয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই ব্যবসা কেন্দ্র। নানা সমস্যা, সুযোগ সুবিধার অভাবে চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপ। বর্তমানে ব্যবসা কমে দাড়িয়েছে ২০ শতাংশে।

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে অনুদানের টাকা হস্তান্তরকালে চট্টগ্রামে নানা সমস্যা, বঞ্চনার অভিযোগ তুলে ধরেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।

তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যিক রাজধানীর গালভরা বুলিতে খুশি করা হলেও এ অঞ্চলের প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি। ফলে পথে বসেছেন অনেক ব্যবসায়ী। পণ্য আমদানির অনুমতি, ব্যাংক ঋণ সবকিছুর জন্য ঢাকার মুখাপেক্ষী হওয়ায় বাড়ছে খরচ। ব্যক্তিগত প্রভাব না থাকলে পণ্য আমদানিতে ডলারের বিনিময় হারেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। কোন ব্যাংকে ডলারের দর ১২০ টাকা, আবার অন্য কোন ব্যাংকে ডলার প্রতি দিতে হচ্ছে ১২২ টাকা। ফলে বাড়ছে পণ্যের দাম।’

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘এখানে কারো প্রভাব আছে ওর কাছ থেকে নিচ্ছে ১২০ টাকা, আমার কাছ থেকে নিচ্ছে ১২১ টাকা, অন্যজনের কাছ থেকে নিচ্ছে ১২২ টাকা। এখানেই কিন্তু আমরা অসামঞ্জস্য একটা প্রতিযোগিতায় পড়ে যাচ্ছি।’

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সারাদেশে মহাসড়কে ১৮ থেকে ২০ টন পণ্য পরবিহনের সুযোগ পান ব্যবসায়ীরা। অথচ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই শঙ্কায় ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১২ থেকে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করা যায় না। বাড়তি পরিবহন খরচের কারণে অন্য অঞ্চলের সাথে পণ্যের দামে দেড় থেকে দুই টাকা ব্যবধান থাকে। এতে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হলেও আইনি বিরোধ নিষ্পত্তিতে নেই হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চ।

মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম বলেন, ‘এই যে আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। এইটা আগেও ছিল এখনো আছে। নতুন সরকার আসার পরেও এখনো চলছে। এই বিষয়টি আমি গভীরভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘চট্টগ্রামের সাথে এটা পক্ষপাতিত্বের বিষয় না এটা বৈষম্য নিরসনের বিষয়। যদি উনি মনে করেন বৈষম্য হচ্ছে তাহলে বৈষম্য নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া টা আমি অত্যবশ্যক মনে করি।’

চট্টগ্রাম চেম্বারে প্রকৃত ব্যবসায়দের প্রতিনিধিত্ব থাকায় এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সুবিধা বাড়েনি স্বীকার করে

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘এখনই সংস্কারের সবচেয়ে সঠিক সময়। এই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে দেশ পিছিয়ে যাবে।’

সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাইলে, ব্যবসায়ীদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে সংস্কারের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। চট্টগ্রামে অপ্রয়োজনীয় উন্নয়নে হয়েছে মন্তব্য করে বলেন, প্রয়োজন না থাকলেও ১১ হাজার কোটি টাকা খরচ করে কর্নফুলী নদীর তলদেশে টানেল তৈরি করা হয়েছে, যা কোন কাজ আসছে না।

মুক্তিযুদ্ধ, দুর্যোগ, ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই আজম বীর প্রতীক বলেন, 'কর্নফুলী নদীর তলদেশে দিয় টানেল হয়েছে । এটা কার জন্য হয়েছে, কী হয়েছে, কারা চাপিয়ে দিয়েছে, পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট এমন ছিল, আমাদের এখানের প্রশাসকরা কিছু বলে নাই এবং ক্ষমতাধর সব প্রক্রিয়াগুলোই ছিল গণমানুষের বিরুদ্ধে।'

আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর আন্তরিক চেষ্টা থাকলেও সরকারকে বিব্রত করতে একটি মহল দুর্গোৎসবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।

অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে খাতুনগঞ্জে ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রায় ৬৪ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়।