এবারের বন্যা ছিল পূর্বাঞ্চলের ৮ জেলার মানুষের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। ৫৬ জনের মৃত্যু ছাড়াও ভেসে গেছে ফসলের ক্ষেত। বন্যা ছাপ রেখে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি, স্কুল, স্বাস্থ্য প্রতিটি খাতেই। দীর্ঘদিন পানি না নামায় অবকাঠামোতে সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছে সড়ক ব্যবস্থা।
বন্যার পরবর্তী পরিস্থিতি প্রতিবেদনে সিপিডির তথ্য বলছে, খাত ভিত্তিক কৃষি ও বনায়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি ৩৫.৮৫%, আর্থিক অঙ্কে ৫ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। অবকাঠামোয় ৪ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা, যা মোট হারের ৩২%।
তবে উপখাতে কৃষি-মৎস্য খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই খাত মিলে এটি ৩১.৯%। তবে কৃষি ছাড়াও নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ফেনীতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশনে ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘১৪ হাজার কোটি টাকার মতো যে ক্ষতিটা হলো এটা কীভাবে পোষাণো হবে বা অর্থটা কীভাবে আসবে আমাদের সেটা দেখতে হবে। এবং এ ক্ষতি কিন্তু জিডিপির আকারেও কম না। সেটা আমাদের চলতি অর্থবছরের (২০২৫) দশমিক ২৯ শতাংশের মতো।’
সিপিডি জানায়, কৃষি মৎস্য ও পশু সম্পদের সাথে জড়িত ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সকল পুঁজি হারিয়েছে, ফলে এই মুহূর্তে বিনিয়োগ শূণ্যতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া তাদের পক্ষে ক্ষুদ্র ঋণের অর্থও ফেরত দেয়াও এই মুহূর্তে কঠিন।
সিপিডির সিনিয়র ফেলো মুনতাসির কামাল বলেন, ‘কৃষি ও বনায়ন যে খাত এখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ৫ হাজার ১৬৯ কোটি টাকার মতো, যা মোট ক্ষয়ক্ষতির ৩৫ শতাংশের বেশি প্রায় ৩৬ শতাংশ। এর পরে আমরা দেখি অবকাঠামো খাতে সবচেয়ে বেশি এবং তারপরে আবাসন খাতে ক্ষতি হয়েছে।’
এই দুর্যোগে ৫৩% ব্যক্তিগত খাতে ক্ষতি। ভবিষ্যতে এই ক্ষতি আরো বাড়বে জানিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ সিপিডির।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘মানব্সৃষ্ট বা অন্য যেকোনো প্রাকৃতিক কারণে হোক বাংলাদেশ আগামীতে অনেক বেশি সংখ্যক এ ধরনের দুর্যোগের মধ্যে পড়বে। এই বাস্তবতাকে মেনে আমাদের আগামী দিনের দুর্যোগ মোকাবেলার কার্যক্রম সাজাতে হবে।’
দেশব্যাপী ঝুঁকি পর্যালোচনা ছাড়াও প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত দিক মাথায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা, নগর পরিকল্পনা করার কথা জানান আলোচকরা। একই সাথে বন্যা পূর্বাভাসকে মানুষের বোধগম্য-সহজ ও আধুনিক করার পরামর্শ সিপিডির।