আলাদা ছয়টি দাবানলে পুড়ছে সাড়ে ১২ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের লস অ্যাঞ্জেলস। এর মধ্যে বৃহস্পতিবারও 'শূন্য শতাংশ নিয়ন্ত্রিত তালিকাভুক্ত ছিল তিনটি, অর্থাৎ আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে সমুদ্র ঘেঁষা স্যান্টা মনিকা থেকে মালিবু পর্যন্ত বিস্তৃত ছবির মতো সুন্দর, অভিজাত এলাকা প্যালিসেডস, যেখানে দৃশ্যায়ন হয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্র, রয়েছে টেলিভিশন ও সঙ্গীতাঙ্গনসহ অসংখ্য হলিউড তারকার বিলাসবহুল বাড়ি।
লস অ্যাঞ্জেলসের পশ্চিমে শুধু এই প্যালিসেডসে ১৭ হাজার একর এলাকা ৩৬ ঘণ্টায় গ্রাস করে নিয়েছে দাবানল। এটুকু সময়েই পুড়ে ছাই হাজারের বেশি বাড়িঘর। পুড়ে গেছে প্যারিস হিলটন, বিলি ক্রিস্টাল, জেনিফার গ্রে'র মতো অনেক তরকার বাড়ি।
প্যালিসেডস ও ইটনসহ লস অ্যাঞ্জেলসের সবচেয়ে বড় দুই দাবানলে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত পুড়েছে ২৭ হাজার একর এলাকা। সবটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অগ্নিকুণ্ড থেকে প্রাণে বাঁচতে বাড়ি ছেড়ে সরে গেছেন পৌনে দুই লাখের বেশি মানুষ।
এক অধিবাসী বলেন, ‘আমি এর আগে কখনও এমনটা দেখিনি। এই দৃশ্য দেখে আমি স্তম্ভিত। মা-বাবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছি। কাঁপছিলাম। কী ছিল আর কী দেখছি! চুলোয় পোড়া ছাই চারদিকে। সিনেমাকেও হার মানায় এ দৃশ্য।’
দাবানলের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে যুদ্ধকবলিত অঞ্চলের সঙ্গে আধুনিক শহর লস অ্যাঞ্জেলসের পার্থক্য পাচ্ছেন না সংবাদকর্মীরা।
একজন জানান, এই রাস্তাটা পুরোপুরি বন্ধ। আগুন নেভানোর জন্য পানি ছেটাতে ফায়ার ইঞ্জিনও যেতে পারছে না। বাতাসে তীব্র পোড়া গন্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে থাকার অনুভূতি হচ্ছে। আগুনের তীব্রতায় সব ফুটছে, এমন শব্দ পাচ্ছি।
আরেকজন বলেন, ‘আগুনের যে ভয়াবহতা, তা নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের বড় দলও প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই নয়। আগুন নেভাতে কম পড়ছে পানিও।’
অন্য এক অধিবাসী জানান, যতদূর মনে পড়ে, একজন ফায়ার ফাইটার আমাকে জানিয়েছেন যে টোপাঙ্গায় তারা ৫শ' ইঞ্জিন পাঠিয়েছেন। কারণ সেখানকার অবস্থা অনেক খারাপ। কিন্তু এখানে পুরো এলাকার জন্য মাত্র দু'টো ইঞ্জিন। পানিও ফুরিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দাবানল যে তীব্র বাতাসে দ্রুত ছড়িয়েছে, বাতাসের সে তীব্রতা অন্তত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত থাকবে বলে জানানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া বিভাগের আগের পূর্বাভাসে।
লস অ্যাঞ্জেলসের ইতিহাসে ভয়াবহতম তিনদিনের দাবানলে আর্থিক ক্ষতি প্রায় এক হাজার কোটি ডলার বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবারের মৌসুমে পুরো দেশে এ অঙ্ক পৌঁছাতে পারে পাঁচ হাজার ৭শ' কোটি ডলারে।