সংস্কার হাওয়া বইছে দেশের সব অঙ্গনে। নতুন সরকার গঠনের পর অর্থনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অতীত অনিয়ম তদন্তে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি সহ গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স।
তবে দেড় মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও এখনো তা ১০ শতাংশের বেশি যা অর্থনীতির জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা কাজে আসলেও, একই হারে ঋণ প্রবাহ কমেছে বেসরকারি খাতে। সংকুচিত হচ্ছে ব্যবসায়িক পরিবেশ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শেষ ছয় মাসে, প্রথম ছয় মাসের অর্ধেকে নেমেছে রপ্তানি। এ সময় আমদানিও কমেছে এক তৃতীয়াংশ । এছাড়া ২১-২২ অর্থবছর থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমছে বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ।
এমন অবস্থায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স ডিসিসিআই আয়োজিত দ্বি-বার্ষিক অর্থনৈতিক অবস্থা মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণ সেমিনারে বক্তারা বলেন, চলতি অর্থবছরে ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য যথেষ্ট হবে। তবে, বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে জোর দেন বক্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. সেলিম আল মামুন বলেন, ‘আমার মনে হয় প্রাইভেট সেক্টরে ক্রেডিট গ্রোথ যে ৯ পার্সেন্ট হয়েছে এখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায় তা রোবাস্ট। ইনফ্ল্যাশনের একটা সাইকেল আছে। এটা এমন না যে আজকে কমে গেলে পরের মাসে বেড়ে গেল। এটার একটা ধারা আছে। সেখান থেকে আমরা রিভার্স ধারায় ফিরে আসতে পারবো। আট থেকে নয় মাসের মধ্যে আমরা মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসবো।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ড. মো. আবু ইউসুফ বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে এখন এভারেজের কোনো দাম নাই। আপনাকে প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে। তা না হলে দেশে-বিদেশে কোথাও টিকে থাকতে পারবেন না।’
বক্তারা বলেন, ১০টি দুর্বল ব্যাংকের ওপর নেয়া সিদ্ধান্তে যেন ভালো ঋণ গ্রহিতাদের কোণঠাসা না করে। বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় বরাদ্দ কমানোয় ঘাটতি কমে সরকারি ঋণের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানোর উদ্যোগ অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তি দেবে। তবে এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে রপ্তানি বাড়াতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘আমরা যদি অপারেশনাল থাকতে না পারি, কোনো কারণে যদি অপারেশন বন্ধ করে দিতে হয় তাহলে ম্যাক্রো ইকোনমিক্স স্ট্যাবিলিটি দিয়েও কাজ করতে পারবো না। অপারেটই করতে পারবো না। তো এই অপারেশনাল সিকিউরিটি বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি এখন বেশ জরুরি। একদিকে যেমন এটাকে নিরাপত্তা দিতে হবে, সেই সঙ্গে মানুষের মধ্যে এ বিশ্বাস তৈরি করতে হবে যে এটা নিরাপদ থাকবে।’
অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করছে সংস্কারের সফলতার উপর। ৩ মাসের অস্থিরতায় ব্যাবসায়িক ক্ষতি বছরের বাকি ৯ মাসে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব দাবি করে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলে বাজারভিত্তিক পলিসি রেট কমিয়ে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।