মেঘ, পাহাড় আর বাতাসের যেন আজন্ম বন্ধুত্ব। এই বন্ধুত্বে নতুন যোগ ছোট ছোট কুঁড়েঘর। নদী, বন, সমুদ্রের কোলঘেঁষেও সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে এসব কুটির। যার অবকাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে বাঁশ, কাঠ কিংবা ছন।
ইকো নাম দিয়ে পর্যটক টানছে এসব রিসোর্ট। একঘেয়ে জীবনের ক্লান্তি ভুলতে পছন্দের প্রথমেই এসব রিসোর্ট বেছে নিচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরাও।
গাজীপুরে ৩০ হাজার একরের বেশি জায়গাজুড়ে আছে গজারিবনের বিস্তৃতি। যেখানে শালগাছ ছাড়াও আরও অন্তত ৫০০ প্রজাতির ছোটবড় গাছগাছড়ার সমারোহ।
এখানে শালবনের প্রায় ৮ কিলোমিটার ভেতরে ৮০ বিঘা জমি নিয়ে তৈরি হয়েছে রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট। নামে ইকো হলেও এখানে তৈরি করা হয়েছে ১৯টি সুউচ্চ দালান। প্রতিটি ভবন লম্বায় ৪ তলা।
কয়েকটি মাটির প্রলেপ দেয়া ঘর থাকলেও মূল গেট থেকে কটেজে যাবার বনঘেঁষা রাস্তাটি পাকা। বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ব্যহত করা হয়েছে বনের গতিপথ। বনের সৌন্দর্য উপভোগের ব্যবস্থা করতে গিয়ে বলি দেয়া হয়েছে শাল গজারিকে।
এমন আরও ইকো নামধারী রিসোর্ট আছে এখানে। কাঠ ও বাঁশ দিয়ে অবকাঠামো তৈরি করেই নিজেদের ইকো দাবি করেন তারা। অথচ তাদের কাছেই পুরোপুরি পরিষ্কার নয় ইকো রিসোর্টের ধারণা।
একজন রিসোর্ট মালিক বলেন, 'আমরা প্রকৃতির মাঝে অতিথি আপ্যায়নের জন্য যথেষ্ট সু ব্যবস্থা রেখেছি। প্রতিটা ভবনের উপরে ওয়াচ টাওয়ার রেখেছি। বাঁশ দিয়ে ডেকোরেশন দেয়া হয়েছে।'
এসব রিসোর্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে কংক্রিট, কাঁচ, প্লাষ্টিক ও নানাবিধ রাসায়নিক মিশ্রিত রঙ। তাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে ওই এলাকার বাস্তুতন্ত্র।
প্রাণবৈচিত্র্য গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, 'যেখানে এমন অবকাঠামো নির্মাণের মূল কাঁচামাল আসার কথা প্রকৃতি থেকে। সেখানে এসব ক্ষতিকর কাঁচামাল ব্যবহার হলে পরিবেশ হুমকিতে পড়ে যায়। এগুলো স্থানীয় প্রকৃতি কিংবা সংস্কৃতি উপযোগী নয় অথচ নাম দেয়া হয়েছে ইকো রিসোর্ট।'
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে শতভাগ ইকো রিসোর্ট একেবারেই সীমিত। অন্যান্য হোটেল, মোটেল, রিসোর্টের তুলনায় সেই সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পট ইকো ট্যুরিজমের জন্য আদর্শ হলেও নেই বিনিয়োগ নীতিমালা। বাড়তি ব্যয় অথচ তুলনামূলক কম লাভজনক হওয়ায় শতভাগ ইকো রিসোর্ট তৈরিতে আগ্রহ কম বেশিরভাগ উদ্যোক্তার।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের বলেন, 'একটি ইকো রিসোর্ট হওয়ার জন্য যে ধরণের নিয়ম মানতে হবে, সে বিষয়গুলো নির্ধারণ করা দরকার। তারপর মনিটরিং করতে হবে। প্রকৃতি ভিত্তিক পর্যটন এলাকাগুলোতে যখন ব্যাপকভাবে পর্যটক যায়, তখন সেটা আর টিকে থাকে না।'