আয়ের চেয়ে ব্যয় কমলে, তা সামাল দিতে কম মূল্যের পণ্যের দিকে ঝোঁকে সাধারণ মানুষ। এতে এ ধরনের পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে বাজারে। এছাড়া ব্যয় সংকোচনে কম মূল্যে পরিমাণ মতো বেশি পাওয়া যাবে এমন পণ্যেই বাড়ে ঝোঁক। কিন্তু মূল্যস্ফীতির পুশ পুল খেলায় সে বাজারও এখন অস্বস্তির।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ, তবে মোটা চালের দর বেড়েছে ৩০ শতাংশ, মিনিকেট ১৭ শতাংশ আর পাইজাম ১৫ শতাংশ।
চালের দাম বৃদ্ধির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে সিপিডি জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১৯ মে পর্যন্ত মোটা চালের গড় দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫২ টাকায় দাঁড়িয়েছে। 'মিনিকেট' চালের দাম কেজিতে ৫৮ টাকা থেকে ১৭ শতাংশ বেড়ে ৬৮ টাকা হয়েছে। পাইজাম চালের গড় দাম কেজিতে ১৫ শতাংশ বেড়ে ৫৫ টাকা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, রাজধানীতে সাধারণ তিন ধরনের চালের দাম ধারাবাহিকভাবে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চালের তুলনায় বেশি। আর তার প্রভাব পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর।
একইভাবে মসুর ডালের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গরুর মাংসের কেজি, চিনি আর ভোজ্যতেলের মূল্য বিশ্ববাজারের চেয়ে বেশি বাংলাদেশে। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতিকে গুরুত্ব দেয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
সিপিডি বলছে, ঋণের সুদহার ও বিনিময় হার বাড়ানো হলেও তা কার্যকর হচ্ছে শুধু বেসরকারি খাতে। ফলে মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির সমন্বয় না থাকলে আগামী বছরও আশানুরূপ কমার সম্ভাবনা নেই মূল্যস্ফীতির। চলতি অর্থবছরের অর্থনৈতিক প্রতিবেদন তুলে ধরে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সংস্থাটি জানায়, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, নীতি ও কঠোরতা সরকারি বেসরকারি সবার জন্যই সমান হতে হবে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'ডলারের মূল্য বৃদ্ধির মধ্যেও যদি সরকারের আমদানি করার প্রবণতা অব্যাহত থাকে, উচ্চ সুদে বৃহৎ আকারের প্রকল্প নেয়ার প্রবণতা এবং একইসঙ্গে সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় অব্যাহত রাখার প্রবণতা থাকে তালে এ দুর্ভোগ সরকারের মধ্যে যারা আছে তারা টের পাবে না। এটা টের পাবে আসলে জনগণ। আমাদের কাছে মনে হয়, সরকারের উচিত হবে আইএমএফ এর সঙ্গে সংস্কারের ক্ষেত্রে যে কিছুটা ফ্লেক্সিবিলিটি আছে, এটা যেন সরকার কোনোভাবে দুর্বলতা হিসেবে বিবেচনা না করে।'
সরকারি ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা ইতিবাচক উল্লেখ করে সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশি ঋণের সুদ ও অবকাঠামোগত ঋণ পরিশোধে ও ডিভিডেন্ড পরিশোধে চাপ সামাল দিতে অন্তত ৬০ শতাংশ রাজস্ব আদায় করতে হবে, যা সক্ষমতার তুলনায় অনেকটাই অবাস্তব। তবে কর আদায়, কর ছাড় ও প্রণোদনার ক্ষেত্রেও ন্যায্যতা রাখতে হবে।
সিপিডির রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল বলেন, 'যদি আমি রাজস্বের মাধ্যমে আয় না করতে পারি, সেক্ষেত্রে আমাকে ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, আমাকে টাকার একটা বড় অঙ্ক আয় করে সেটাকে বিদেশি মুদ্রায় রুপান্তর করে তারপর ঋণ শোধ করতে হয়। সেক্ষেত্রে পরে এক্সটার্নাল ডেট আসার বড় রকমের সম্ভাবনা আছে।'
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা চলমান রাখতে হবে আসছে বছরেও। বাজারমূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাড়াতে হবে সহায়তার পরিধি।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'বেশ কিছু খাতকে সরকার কর অব্যাহতি দিয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে মনে হয়েছে সে খাতগুলোতে কর অব্যাহতি না দিলেও তারা আসলে তাদের কমপিটিটর বেসকে ধরে রাখতে পারবে।'
সিপিডির মতে বিদেশি বিনিয়োগ যতটা বৃদ্ধির লক্ষ্য ছিলে, তা পূরণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরদের আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। স্বাস্থ্য শিক্ষার বাজেট ব্যবহারে সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন মন্ত্রণালয়ের। পাশাপাশি এই মুহূর্তে নতুন অর্থনীতির পরিসংখ্যান, বাজার, গবেষণা ও প্রক্ষেপণ মূল্যায়ন আমলে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পরামর্শ গবেষণা সংস্থাটির।