সংস্কৃতি ও বিনোদন
অর্থনীতি
0

পয়লা বৈশাখ ঘিরে ঘটে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন

চৈত্র সংক্রান্তি বা পহেলা বৈশাখের আয়োজন দুটোই যেন জড়িয়ে আছে বাঙালির সত্তা ও সংস্কৃতিতে। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখের আয়োজন বাঙালির হৃদয় রাঙিয়ে তোলার পাশাপাশি বিশেষ ভূমিকা রাখে জনজীবন ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে। কালের আবর্তে বৈশাখী মেলাসহ হারাতে বসেছে এমন নানা আনুষ্ঠানিকতা। অর্থনীতিবিদের মতে, গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে মেলাসহ সংক্রান্তির উৎসব ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই।

চৈত্রের খরতাপে পুড়ছে রুক্ষ কংকালসার নদী; সেই সাথে জলে ভাসা নদীর দুঃখরাও। বুক চিতিয়ে জেগে ওঠা বালুচর, যার কণায় কণায় ঘাম ঝড়া মানুষের জীবনাচার। ভাঙনের গল্প নিয়ে সিকস্তি থেকে পয়স্তিতে এসে নোঙর ফেলে যারা। তাদের চোখে-মুখে এখন শীতল ছায়ার স্পর্শ পাবার আকুলতা।

বর্ণিল সৌন্দর্য নিয়ে দুলছে আগুন রাঙা পলাশ-কৃষ্ণচূড়া ও জংলি ফুলের ঝোঁপ। ঝড়ে পড়া হিজল ফুলের স্নিগ্ধ পরশ মাখা পথের পাঁজর। ফসলের মাঠে মৃদুলা হাওয়ায় দোল খাওয়া নবান্নের গান।

বাকল ফুঁড়ে বেরনো মুকুল থেকে সদ্য জন্ম নেয়া আমের গুটি। সবই যেন চৈত্রকে বিদায় জানানোর পাশাপাশি ব্যস্ত বৈশাখ বন্দনায়।

প্রচলিত আছে মোঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে বৈশাখকে বছরের প্রথম মাস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে বাংলা বছরের প্রথম দিন মেলা, হাল খাতাসহ নানা আয়োজন হয়ে আসছে। যা এখনো গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

লোক গবেষক স্বপন ধর বলেন, 'বৈশাখ থেকে নতুন খাতা শুরু করা হবে। অর্থাৎ নতুন বছর থেকে নতুন হিসাব শুরু করবে।'

একসময় চৈত্র ও বৈশাখে হাডুডুসহ আয়োজন হতো নানা খেলার। কালের পরিক্রমা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যা এখন বিলুপ্ত প্রায়।

স্থানীয় একজন বলেন, 'দাড়িয়াবান্ধা, কাবাডি এইসব খেলা খুব প্রচলন ছিল। এখন তো এইসব কিছুই নেই।'

আরেকজন বলেন, 'চৈত্র ও বৈশাখ মাস আসলেই আমরা হাডুডু, ফুটবল, দাড়িয়াবান্ধা এইসব খেলার আয়োজন করতাম। এখন মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।'

আধুনকতার চাপে কমেছে মাটির তৈরি পণ্যের চাহিদা। তাই আগের মতো ব্যস্ততা নেই ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার পাল পাড়ায়। তবে বৈশাখী মেলা ঘিরে কিছুটা ব্যস্ততা ফিরলেও আশানুরুপ বিক্রি নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় এখানকার মৃৎশিল্পীরা।

মৃৎশিল্পীদের একজন বলেন, 'হাড়ি, পাতিল ও কলস তৈরি করতাম। এখন তো এইসব চলে না। প্লাস্টিকের জিনিসপত্র এসে এসবের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।'

অর্থনীতিবিদ ড. নাজিয়া তাবাসসুম বলেন, 'যথাযথ আয়ের অভাবে বা মূলধনের অভাবে তারা এই পেশা থেকে বেরিয়ে আসতেছে। কিন্তু আমরা যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশের দিকে তাকায় তাহলে দেখা যাবে মৃৎশিল্প তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।'

চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসে গ্রামীণ মেলা। সার্বজনীন এই উৎসবে বিভিন্ন জনপদ একসময় সরব থাকলেও দিন দিন কমছে এর পরিধি।

তবে ১৪৩১তম বাংলা বছরকে বরণে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যার জন্য আবহমান বাংলার বিভিন্ন লোকজ উপাদানের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে মুখোশ, মূর্তি, ট্যাপা পুতুল, পাখিসহ নানা কিছু।

শিক্ষার্থীরা বলেন, 'চারুকলার শিক্ষার্থীদের পহেলা বৈশাখ হচ্ছে ঈদের মতো।'

আরেকজন বলেন, 'হাজার বছরের সংস্কৃতিগুলোকে আমরা লালন করি, ধারন করি তাহলে এইগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর একটা দেশ উপহার দিবে।'

বৈশাখসহ সংক্রান্তির উৎসবগুলো বাঙালি জীবনে অনন্য লোকায়ত সংস্কৃতির ধারক হয়ে বেঁচে থাকুক প্রজন্মের পর প্রজন্ম এমন প্রত্যাশা সকলের।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর