বছরে কোটি টাকা ক্ষতির দাবি পটুয়াখালীর জেলেদের

0

দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র মহিপুর ও আলীপুর বন্দর। সমুদ্রের কাছে এই বন্দরে ইলিশসহ সব মাছ নিয়ে বিক্রির জন্য আসেন হাজারও জেলে। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ বন্দরটির খাপড়াভাঙ্গা নদের মোহনায় জেগে উঠেছে ডুবচর। জোয়ার-ভাটা বিবেচনা করে যাতায়াত করতে গিয়ে বছরে কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে ট্রলার মালিক ও জেলেদের।

দেশের সিংহভাগ সামুদ্রিক মাছের চাহিদা মিটিয়ে আসছে পটুয়াখালীর খাপড়াভাঙ্গা নদের তীরবর্তী মহিপুর ও আলীপুর বন্দর। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সমুদ্রের মাছ বেচা-কেনা হয় এখানে।

সামুদ্রিক মাছ বেচার জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে আসেন ট্রলার মালিকরা। তবে ২০১৪ সালের দিকে ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খাপড়াভাঙ্গা নদের মোহনায় সৃষ্টি হয় ডুবচর। এতে মাছ বোঝাই ট্রলার যাতায়াতে তৈরি হয় বাধা।

স্থানীয় একজন জেলে বলেন, 'চর না থাকলে আবহাওয়া খারাপ হলেও আমরা যখন তখন চলে আসতে পারি। জোয়ারের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয় না। যখন তখন এসে মাছ বিক্রি করে আমরা চলে যেতে পারি। এই চর কাটলে আমাদের অনেক উপকার হয়। আমরা শান্তিতে ঘাটে আসতে পারবো।'

|undefined

নদীতে চরের কারণে ট্রলার চলাচল করতে অসুবিধা হয়। ছবি: এখন টিভি

বিশেষ করে সাগর ও নদে জোয়ারের জন্য বন্দরে পৌছাতে বিড়ম্বনার পড়তে হচ্ছে জেলেদের। এতে সময় মতো পৌঁছতে না পারায় মাছের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা।

এদিকে, বন্দরের খাপড়াভাঙ্গা নদে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ার কথা জানান, ট্রলার মালিকরা। এছাড়া চরে আটকে পড়ায় বছর শেষে গুনতে হচ্ছে কোটি টাকার লোকসান।

ট্রলার মালিক মো. আবু জাফর বলেন, 'এ চরের জন্য আমাদের মাছ পচে যায়। আমরা ভালো দাম পাই না। এ কারণে জেলেদের সবাই অনশনে থাকতেন। এটি কাটলে আর অনশনে থাকতে হবে না।'

২০২১ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন এর উদ্যোগে চালু হয় আলীপুর ও মহিপুরে দু'টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। মহিপুর বন্দরটি পুরোপুরি চালু না হলেও সরকারি সুযোগ সম্বলিত হয় আলীপুর কেন্দ্রে। এখানে গত দুই বছরে ২৫০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হওয়ায় প্রায় ২০ লাখ টাকার রাজস্ব আয় পেয়েছে কর্তৃপক্ষ।

পটুয়াখালীর আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের হিসাবরক্ষক, মো. জাকির হোসাইন বলেন, 'যদি এ খাল খনন করা হয় তাহলে আমাদের এখানে চট্টগ্রাম ও বাঁশখালির নৌকাগুলো ঢুকতে পারবে। এতে মাছ বেশি হবে। যার জন্য সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। এবং সরকার লাভবান হবে।'

|undefined

এখন টিভির সঙ্গে কথা বলছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। ছবি: এখন টিভি

পুষ্টি সমৃদ্ধ সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ ও বাজারজাত সহজে লক্ষ্যে খাপড়াভাঙ্গা নদের মোহনার খননের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

তিনি বলেন, 'মহিপুর, আলীপুর মৎস্য বন্দরকে কেন্দ্র করে ৪০ হাজার মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। আমরা বিশ্বাস করি ৪০ হাজার মানুষেরই উপকারে আসবে। তাছাড়া এ রোড ব্যবহার করে ফাতরারবনসহ আরও বেশকিচু যায়গায় পর্যটকরা যায়। সেজন্য আমাদের স্থানীয় বোট পেশায় যারা জড়িত তারা লাভবান হবে।'

খাপড়াভাঙ্গা নদের এই ডুবচর অপসারণে কর্তৃপক্ষ কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে আশা বিশেষজ্ঞদের।

এসএস