নানা কেলেঙ্কারি ও খেলাপি ঋণসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে নাম পরিবর্তন করলেও ব্যাংকের অনিয়ম থামেনি। এতে দিনে দিনে গ্রাহকরা হারিয়েছে আস্থা, আর নষ্ট হয়েছে ব্যাংকটির আর্থিক সক্ষমতা।
নাম পরিবর্তনের আগে ২০১৭ সালে ব্যাংকটিকে বাঁচাতে মূলধন সহায়তা দেয় সরকারি চার ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবি। সে বছর ব্যাংকটির ৫৩ কোটি টাকা নিট লোকসান হয় এবং আমানত কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। যেখানে সে সময় ব্যাংকটির ঋণ ছিল ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।
সেসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে ব্যাংকটির যেসব আর্থিক অনিয়ম বেরিয়ে আসে, তা হিসাবে নিলে লোকসান বাড়ে কয়েকগুণ। বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি ফেরত না আসার আশঙ্কা করা হয়। এতে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয় ব্যাংকটি।
পরে ২০১৯ সালে নাম পরিবর্তন করেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পদ্মা ব্যাংক। বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। ২০২৩ সাল শেষে পদ্মা ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আমানতই ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। যা ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকটি।
এ অবস্থায় গত ১৮ মার্চ একীভূত হওয়ার চুক্তি স্বাক্ষর করে শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম আর পদ্মা ব্যাংক। তবে এ নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সক্ষমতাও খুব বেশি ভালো নয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। ১৯৯৯ সালে এটি সাধারণ ধারায় ব্যাংকিং শুরু করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে ইসলামি ধারায় পরিচালিত শরীয়াহ কার্যক্রমে নিজেদের পরিবর্তন করে ব্যাংকটি। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী এক্সিম ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ৪৩ হাজার কোটি টাকার হলেও ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি রয়েছে ১ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা।
এমন অবস্থায় একীভূত হওয়া পদ্মা ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, চলমান শাখা এবং সকল দায়ের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত হবে তা খোলাসা করতে পারেনি ব্যাংক দুটির কেউ। শুধু সব আমানত ফিরিয়ে দেয়া এবং সবাইকে চাকরিতে বহাল রাখার কথা জানানো হয়। সেক্ষেত্রে এক ব্যাংকে দুই এমডি থাকবে কি-না সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
অন্যদিকে পদ্মার দায়ের কারণে এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'নেগেটিভ নেটওয়ার্কের টাকা কে দিবে? কারণ এটা দিয়েই তো আমানতকারীদের টাকা শোধ করবে। তাহলে এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ভ্যালু কমে যাবে। তাদেরকে কেন প্রতারিত করা হবে। সে প্রশ্নটা তো আসবে, তাদের লাভটা কোথায়। সাধারণ শেয়ারহোল্ডারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা কাম্য নয়।'
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন সঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে একীভূতকরণ ব্যাংক খাতের জন্য ভালো হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের পরিচালক অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী বলেন, 'এক্সিম ব্যাংকের যে সমস্ত সামর্থ্য বা সুবিধাগুলো আছে সবগুলো পদ্মা ব্যাংকে চলে যাবে। আবার পদ্মা ব্যাংকের ত্রুটিগুলোও মুছে যাবে যদি তারা এক্সিম ব্যাংকের সঠিক নীতিগুলো গ্রহণ করতে পারে।'
দেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে পদ্মার মতো দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এক্সিম ব্যাংক। তবে শুধু অন্যের ভালো করতে যাওয়ার চেয়ে নিজেদের ব্যবসা এবং শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষায় ব্যাংকগুলোকে আরও মনোযোগী হতে বলছেন বিষেশজ্ঞরা।