রোববার (১০ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে।
ডলার ও জ্বালানি সরবরাহ না পাওয়ায় প্রতিকূল সময় পার করছে উৎপাদন ও আমদানি-রপ্তানি খাত। এ অবস্থায় উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে মাত্র দুই অর্থবছর হাতে রেখে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে সরকার ও ব্যবসায়ীদের। তাই আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে দুপক্ষই। অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে সহযোগিতার আশাও দেয়া হচ্ছে।
কাস্টমসে হয়রানি বন্ধ ও এইচএস কোড জটিলতা নিরসন, ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো, এআইটি ছাড়সহ নানা প্রস্তাবনা নিয়ে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআরের মুখোমুখি হন ব্যবসায়ীরা। তারা প্রস্তাব করেন পিপিপির আওতায় ভ্যালু ফর মানি প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার। এছাড়া পুঁজিবাজার থেকে সরাসরি অবকাঠামো ঋণ গ্রহণ ও শিল্পক্ষেত্রে জ্বালানি আরও সাশ্রয়ী করার দাবিও ব্যবসায়ীদের।
তারা বলেন, 'আইনে যেখানে অনেক ধরনের জটিলতা রয়েছে এবং এ জটিলতার কারণে আমদানি-রপ্তানি পথে পথে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমদানি করা বিদ্যুতের ওপর যেন কাস্টম শুল্ক কিছুটা আরোপ করা হয়। যাতে সামঞ্জস্যতা থাকে। গ্যাস সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কিন্তু উৎপাদন ও বেসরকারি খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।'
নানামুখী সংকট সমাধানে টাকা পাচার ও খেলাপি ঋণ বন্ধের পক্ষে মত দেন ব্যবসায়ীরা। ঋণ নিয়ে যারা বিনিয়োগ করেনি তাদের তালিকা চাওয়া হয়।
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ বলেন, 'যে লোকটা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে গেল কিন্তু বিনিয়োগ করলো না। অর্থ বিদেশে পাচার করে দিলো, তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন তা অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই।'
ব্যবসায়ীদের এ দাবির সঙ্গে একমত সরকার পক্ষও। ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে সুনির্দিষ্ট করার পক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।
তিনি বলেন, 'ঋণ নিয়ে যদি যথা সময়ে তা পরিশোধ করেন, তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক সক্রিয়তাটা কিন্তু বাড়বে। আপনাদের যেমন প্রত্যাশা থাকবে, সরকারেরও প্রত্যাশা থাকবে। এ দুইয়ের সমন্বয়ে দেশ এগিয়ে যাবে।'
আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, কর জিডিপির হার নিয়ে যে সমালোচনা আছে, তা কাটিয়ে উঠতে চান তারা। তবে উৎপাদন সক্ষম পণ্যের আমদানিকে নিরুৎসাহিত করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'আমাদের অনেক পণ্য এখনও আমদানিনির্ভর হয়ে আছে। আমরা খুঁজে খুঁজে বের করছি সেই আইটেমগুলোকে। এ বিষয়ে আমরা সহায়তার ব্যবস্থা করছি।'
আগামী অর্থবছরে ব্যবসায়ীদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হবে জানিয়ে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
তিনি বলেন, 'সরকারের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও টেকসই স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। এ লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব অপরিহার্য। কোভিড-১৯ পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকটকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাসহ বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বেসরকারি খাত। আর বাজেট প্রণয়নের মধ্য দিয়ে দেশের বাণিজ্য, শিল্পোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনা প্রতিফলিত হয়।'