দেশে ৩৭.৯১ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজে জড়িত। এই পুরো জনশক্তির হাতে ফসল উৎপাদনের হার মাত্র ১২ শতাংশ। অর্থাৎ ১২ শতাংশ উৎপাদনের ওপর নির্ভর মানুষের ব্যবস্থাপনার বাজারে মূল উৎপাদক কৃষক বরাবরই বঞ্চিত হন।
উৎপাদিত পণ্যের বাইরে আমদানি পণ্যেও বাজার ব্যবস্থাপনায় অভ্যন্তরীণ কারসাজিতে মূল্যস্ফীতির চাপে ভোক্তারা। সেখানেও সাধারণ নিত্যপণ্য হয়ে উঠে দুর্মূল্যের। যোগান থাকার পরও পরিস্থিতি সামাল দিতে আমদানি করতে হয় নানা পণ্য। এমন সময়ে বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করার কথা উঠে আসে সিরডাপের আলোচনার টেবিলে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তাফা কে মুজেরী বলেন, ‘মূল্য শৃঙ্খলাগুলোকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় নীতিকাঠামো যদি পরিবর্তন করতে পারি তাহলে আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিস্থিতিতে বাজার ব্যবস্থায় যেতে পারবো। যেখানে আমরা দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতাকে অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবো।’
মূল্যস্ফীতি কমাতে চাইলেও মূল্যস্তরে খুব পরিবর্তন হচ্ছে না। তাই আয় বাড়িয়ে এটি সহনীয় করা প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে মূদ্রানীতিতে পরিবর্তন আসছে, প্রভাব পড়ছে উৎপাদন এবং বিনিয়োগে।
সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি। ১০০ টাকারটা ১১০ টাকা হলো তারপরে মূল্যস্ফীতিকে ৮ শতাংশে কমিয়ে সেটা কিন্তু ১১০ টাকার উপরে ৮ টাকা হবে। যা ১১৮ টাকা ৮০ পয়সা হবে। সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এটাকে মানুষের কাছে সহনীয় করতে, দেখতে হবে আয় বাড়াতে পারছি কিনা।’
এদিকে বাজার ব্যবস্থাপনা কার্যকর করতে রাজস্ব ও মুদ্রানীতিতে সমন্বয় প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘সবারই দাবি হলো শুল্ক কর কমানো। শুল্ক কর যদি কমানো হয় তাহলে সরকারের পক্ষে ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব নয়। বাজারের আচরণের দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই দায়িত্বটা আসলে সরকারের রেগুলেটরি কমিশনকে নিতে হবে। রেগুলেটরি এজেন্সির কাছে যদি সঠিক তথ্য থাকে তাহলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।'
এরই মধ্যে চালের বস্তায় ধানের জাত, প্রস্তুতকারক, সময়, উৎপাদক, মিলগেট মূল্য, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উন্মুক্ত করার নীতি জারি করেছে সরকার। তবে চাল ছাড়াও উৎপাদিত ও আমদানি পণ্যে কোন ফ্রি মার্কেটের নামে অস্থিরতা তৈরি করতে দেয়া হবে না বলে জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। তাই আগামীতে আমদানি করা পণ্যমূল্যেও আমদানি-গুদামজাত-খুচরা পর্যায়ের দাম নির্ধারণ করা হবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, 'ফ্রি মার্কেটের নামে এগুলা অ্যালাউ করে, ফ্রি মার্কেটের নামে র্যান্ডমলি প্রাইস বাড়তে দিতে পারি না। বিশেষ করে, জরুরি কমোডিটির ব্যাপারে। আমরা আগামীতে ইম্পোর্টেড প্রাইসের উপর যতগুলি এসেন্সিয়াল কমোডিটি নির্ধারণ হবে ইম্পোর্ট প্রাইসের উপরে প্রতিমাসে আমরা আমদানি পর্যায়ে, উৎপাদন পর্যায়ে এবং ভোক্তা পর্যায়ে দাম কত হবে এটা নির্ধারণ করে দেবো।
রমজানে কোন পণ্যের সংকট থাকবে না, রিজার্ভ থেকে মানুষের স্বার্থে খরচ হচ্ছে। তিনমাসের আমদানির খরচ রিজার্ভে আছে বলেও আশ্বস্ত করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।