স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ৩০ শয্যা বিশিষ্ট জরাজীর্ণ টিনশেডের হাসপাতালের পাশে নির্মাণ করা হয় ৪ তলা বিশিষ্ট দুটি ভবন। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘিরে উন্নত সেবার প্রত্যাশায় বুক বাঁধেন মেঘনা পাড়ের এ জনপদের মানুষ। কিন্তু নির্ধারিত মেয়াদ শেষে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। ফলে উন্নত সেবার বদলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের।
এলাকাটি নদীবেষ্টিত হওয়ায় চরের মানুষের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই একমাত্র ভরসা। স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে ২০১৯ সালে চাঁদপুরের হাইমচরে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি কাজ।
এখানে নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে, অপারেশন থিয়েটার তো দূরের কথা, রক্ত পরীক্ষারও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অনেকসময় চিকিৎসা না পেয়ে পথেই মারা যায় অনেক রোগী।
প্রায় ২৭ কোটি টাকা বাজেটে কাজ শুরু করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক কনস্ট্রাকশন। হাসপাতালের আধুনিক ভবন নির্মাণের জন্য পুরনো ভবনের অর্ধেক ভেঙে ফেলা হলেও শেষ হয়নি নতুন ভবনের কাজ। ২ বছর মেয়াদি প্রকল্পের মেয়াদ ৬ দফা বাড়ানো হলেও ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ২০২৪ সালে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় যত্রতত্র সেবা নিচ্ছেন রোগীরা।
এদিকে, জনবল সংকটেও ভুগছে হাসপাতালটি। ১২৩ জন চিকিৎসক-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৬৭ জন। বিশেষ করে অ্যানেসথেসিয়া ও সার্জারি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
শুধু হাসপাতাল ভবন নয়, চিকিৎসক ও নার্সদের থাকার জন্য নির্মিত ৬টি ভবনের কাজও অসম্পন্ন। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দাবি, নতুন প্রকল্প অনুমোদন পেলে কাজ আবার শুরু হবে।
হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. একেএম আব্দুল মামুন বলেন, ‘ভবনটা না হবার কারণে ল্যাবের কাজগুলো করা যাচ্ছে না। যেমন আমাদের সেল কাউন্টার মেশিন নেই। এছাড়া চরের যে রোগীগুলো আসছে আমরা তাদের ঠিক মতো টেস্ট করতে পারছি না। তাদের বাহিরে গিয়ে টেস্ট করতে হয়।’
চাঁদপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘অজ্ঞাত কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কাজ ফেলে রেখে চলে যায়। বাকি কাজ শেষ করার জন্য আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’
১শ' ৭৪ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অসম্পন্ন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করার পাশাপাশি জনবল সংকট দূর করতে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন দাবি সাধারণ মানুষের।