শেরপুরে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষা হারানোর ঝুঁকি, পাঠ্যবই ও শিক্ষক সংকট

দেশে এখন
এখন জনপদে
0

হারিয়ে যাচ্ছে শেরপুরের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সাতটি সম্প্রদায়ের নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি। পারিবারিক চর্চা কমে যাওয়া ও নিজস্ব ভাষায় লেখাপড়ার সুযোগ না থাকায় সময়ের সাথে ক্ষয়ে যাওয়ার পথে এর ঐতিহ্য। এমন অবস্থায় ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় একটি কালচারাল একাডেমি ও নিজস্ব ভাষার পাঠ্যবইয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন অনেকে।

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড় অবস্থিত। যেখানে গারো, কোচ, হাজং, বানাই, ডালুসহ সাতটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৫০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস।

এ মানুষগুলোর রয়েছে নিজস্ব ভাষা। তাদের পরিবারের সুখ-দুঃখের গল্পটা চলে নিজ মাতৃভাষাতেই। কিন্তু ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতে হাঁটতে হয় বাংলা ভাষার হাল ধরে। তাই দিন দিন নিজ মাতৃভাষা হারিয়ে যাওয়ায় আক্ষেপে তারা। গারো ও কোচ ভাষা কোনোমতে টিকে থাকলেও অন্য ভাষা হাঁটছে বিলুপ্তির পথে।

প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় নিজস্ব বর্ণপরিচয়, চর্চা ও লেখাপড়ার সুযোগ না থাকায় এমন অবস্থা বলে মনে করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর। কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষার বই থাকলেও শিক্ষক না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বইগুলো পড়ানো যাচ্ছে না। ফলে শিকড় থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে এসব জাতিগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ উত্তরসূরিরা।

সমস্যার কথা স্বীকার করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের ভাষা থাকলেও তাদের কোনো পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষক নেই। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে উপজাতিদের ভাষাভিত্তিক শিক্ষক তৈরির প্রচেষ্টা চলমান আছে বলে জানান তিনি।

শেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘ আমাদের শিশু জরিপ করা আছে তবে আমরা হালনাগাদ একটি জরিপ করে নেব। সেটা করে মোট কত শিশু আমাদের রয়েছে যারা নিজেদের ভাষা শিক্ষা অর্জনে আগ্রহী সেটা দেখে আমরা যাদের প্রশিক্ষণের বাকি রয়েছে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব।’

শেরপুরের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব ভাষা রক্ষা এবং সরকারিভাবে একটি কালচারাল একাডেমি স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

শেরপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাফিজা জেসমিন বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। ২০২৩ সালে শেরপুরে এই এথনিক সার্ভেটি সম্পন্ন হয়েছে এবং এর ফাইনাল রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এটি পরবর্তী কর্মসূচি প্রণয়নে ভালো একটি ভূমিকা রাখবে।’

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা 'আদিবাসী উন্নয়ন প্রকল্পের' তথ্যমতে, জেলায় গারো ১৬ হাজার ৫০০, হাজং ৪ হাজার ৭০০, হদি ১০ হাজার ৬০০, বর্মণ ১৭ হাজার, কোচ সাড়ে তিন হাজার, ডালু ১ হাজার ১০০, বানাই ১১০ জন রয়েছেন।

এএম