চরের এই বিস্তীর্ণ ভূমি। এখানে বিচরণ করে গবাদিপশু। চাষাবাদ হয় ধান-ফসল। দরিয়ায় ঘর-বসতি হারানো মানুষগুলো স্বপ্ন দেখে নতুন করে মাথা গোজার ঠিকানা করার। কিন্তু সেই ভূমিতে বদ নজর পড়েছে প্রভাবশালী মহলের। মাছের প্রকল্পের নামে চলছে বেদখল। দখলদারদের কবলে পড়ে জমি হারানোদের একজন মাহতাবুর রশিদ। স্থানীয় চর খোন্দকার মৌজায় তার জমি ছিল ২২ একর।
সবটা দখল করে দখল করে এখন মৎস্য প্রকল্প করেছে প্রভাবশালী মহল। নিজের জমি দখল মুক্ত করার জন্য প্রশাসনের কাছে বছরের পর বছর গিয়েও পাননি সমাধান।
ক্রমাগতভাবে চর দখল করে এভাবে অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য প্রকল্প ও বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নদীর গতিপথ। নদীতে মাছ কমায় জীবিকা নিয়ে চিন্তিত জেলে সমাজ।
বিস্তীর্ণ বিচরণ ক্ষেত্রগুলো দখল হওয়ায় লালনপালন করা যাচ্ছে না গুরু,মহিষ ভেড়ার মত গবাদিপশু। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক খামারিরা।
স্থানীয় বিশেষজ্ঞ মহল ও সমাজকর্মীরা বলছেন দখলকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। একরের পর এক জমি কেটে নিজেদের করে নিচ্ছেন। প্রান্তিক কৃষক ও জেলেরা হয়ে পড়েছে অসহায়। এদিকে প্রশাসন বলছে, কিছু অবৈধ দখলদারের তালিকা ইতোমধ্যে হয়েছে। অভিযানও পরিচালিত হচ্ছে।
সোনাগাজী উপজেলা সু-শাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি শেখ আবদুল হান্নান বলেন, ‘এই এলাকার শত শত মানুষ ভেড়া ও মহিষ পালতেন। কিন্তু এখন এই জায়গা অবৈধভাবে অনেকগুলো মৎস্য ঘের তৈরি করার কারণে এখানে চারণভূমি নেই। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ ব্যবসা গুটিয়ে নেবে।’
ফেনী সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ১১টা তালিকা করা হয়েছে এবং এগুলো অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করা হয়েছে। এর বাহিরে উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।’
২০১২ সালের দিকে বড় ফেনী নদীর বাঁকা নদী সোজা করণ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ফেনী নদীর দু'তীরে পলি জমে হাজার হাজার একর জায়গায় নতুন চর জেগে ওঠে। নতুন চর জেগে ওঠায় স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সোনাগাজীর দক্ষিণাঞ্চলে চরাঞ্চলের দৃশ্যপট ও পাল্টে যায়। দেখা দেয় আশার আলো।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, এ সব চরাঞ্চলের থাক খোয়াজের লামছি, চর খোয়াজেরলামছি, চর খোয়াজের লামছি, চর খোন্দকার, দক্ষিণ চর খোন্দকার, চর রাম নারায়ণ, চর এলেন, বাহির চর, পূর্ব বড়ধলী মৌজায় প্রায় ৪০ হাজার একর ভূমি জেগে ওঠে। নতুন চর জেগে ওঠায় এ সব চরাঞ্চলে সরকার ‘সোনাগাজী শিল্পাঞ্চল’ ঘোষণা করে বেশ কিছু ভূমি স্থানীয় ভূমি মালিকদের থেকে অধিগ্রহণ করে নেয়। বাকি চরাঞ্চলে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সোনাগাজী, ফেনী ও চট্টগ্রামের মিরশ্বরাই এলাকার ভূমি দস্যুদের।
৫ আগস্টের পূর্বে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগের জেলা, উপজেলার নেতা কর্মীরা সন্ত্রাসীও তাদের দলীয় বাহিনী নিয়ে এমপি প্রকল্প, এসপি প্রকল্প, ওসি প্রকল্প, মেয়র প্রকল্প, চেয়ারম্যান প্রকল্প বিভিন্ন নামে-বেনামের প্রকল্পের কথা বলে ভূমিসহ বিশাল নদী-খাল ও চরাঞ্চলে পুকুর খনন করে দখল করে নিয়ে যায়। দখল-পাল্টা দখলের ঘটনায় চরাঞ্চলে বেশ কয়েকবার রক্তপাত ও সংঘর্ষের ঘটনায় তখন অশান্ত হয়ে ওঠে সোনাগাজীর চরাঞ্চল।