মধুসুধন বিশ্বাস, খুলনার ফুলতলা উপজেলার গোলদার পাড়ার বাসিন্দা। নিজের জমি থাকা স্বত্বেও গত দুই বছরের বেশি সময় সংগ্রাম করছেন পানির সাথে। অতিবৃষ্টি আর নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবার ফসল ফলানোর অনিশ্চয়তায় তিনি।
কৃষক মধুসুধন বিশ্বাস বলেন, ‘এখন তো আমাদের কষ্টের দিন। না খেয়ে পার করতে হবে। ছেলে মেয়েদের পড়াতে পারছি না। এই চার মাস আমাদের কৃষান বন্ধ। বিশাল সমস্যা।’
মধুসূদনের মত অনেক কৃষকের স্বপ্নই এখন বিবর্ণ দেশের ২য় বৃহত্তম খুলনার বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিয়ে। এই বিল থেকে বছরে উৎপাদন করা হয় কয়েক কোটি টাকার সবজি, মাছ ও বিভিন্ন ফসল। তবে জলাবদ্ধতা সেখানে সব থেকে বড় বাঁধা। যদিও এ জলাবদ্ধতার সূত্রপাত বহু বছর আগে থেকেই।
প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির বিল ডাকাতিয়ায় ৮০র দশকেও ফসল হতো তিনটি। ১৯৮৪ সালে বন্যায় প্লাবিত হয় বিল ডাকাতিয়া অঞ্চল। সেই দুর্যোগে ৭৬ হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়। জলাবদ্ধতা স্থায়ী হয় প্রায় ১২ বছর ধরে। এরপর স্থানীয়দের আন্দোলন সংগ্রামের মুখে তৎকালীন সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও এখনও সেই সমস্যায় ভুগছেন বিল কেন্দ্রিক জীবনযাপন করা লাখো মানুষ।
বর্ষা মৌসুম শেষে এসেছে বোরো আবাদের সময়। বীজতলা থেকে চারা এখন মাঠে রোপণের পালা। তবে বিলডাকাতিয়ার বিলডাকাতিয়ার প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে এখনো জলাবদ্ধতা থাকায় ধানের বীজতলা রূপ নিতে পারছে না চারায়। এতে বোরো ধান চাষ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
চাষিদের একজন বলেন, ‘বিলে যে পানির অবস্থা তাতে মনে হয় বিলে আর ধান হবে না।’
বিল ডাকাতিয়ায় এই অঞ্চলের ছয়টি উপজেলার মোট ৩০ হাজার একর চাষাবাদযোগ্য জমি রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, বিল ডাকাতিয়ার পানি বের হওয়ার একমাত্র চ্যানেল শোলমারী নদীটি পলি পড়ে আংশিক ভরাট হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
চাষিদের একজন বলেন, ‘প্রত্যেকবারই আমাদের ঘের থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মাছ উঠে।’
জেলা প্রশাসন বলছেন, সমস্যা সমাধানে অনেকবার সভা ও গণশুনানি করা হলেও কোন সুফল মেলেনি।
খুলনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিতান কুমার মন্ডল বলেন, ‘বিলডাকাতিয়ার যেসব জায়গায় পলি জমেছে সেসব জায়গায় গভীরতার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আমাদের কথা হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, পাম্প বসিয়ে পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে সমন্বিতভাবে প্রকল্প অনুমোদনের চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে শোলমারী নদী খনন করা গেলে আগামী মৌসুমে বিল ডাকাতিয়া জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে বলছেন কর্মকর্তারা।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাসকিয়া বলেন, ‘এই অঞ্চলের সব নদী ভরে গিয়েছে। এইসব নদী খনন করার জন্য আমাদের পরিকল্পনা চলছে। যদি এই নদী সিস্টেম ঠিক করতে পারি তাহলে এর সমাধান হবে।’
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, শুধু ডুমুরিয়া উপজেলায় ২১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তারমধ্যে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতা রয়েছে। এছাড়াও বিলডাকাতিয়ার চাষযোগ্য প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ১ হাজার হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতা রয়েছে।