সম্রাট আকবরের আমলে সুশৃঙ্খলভাবে খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে বাংলা নতুন বর্ষের উৎপত্তি, সেখান থেকেই শুরু পহেলা বৈশাখের। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে হালখাতার ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার, এলাকাটি স্বর্ণালঙ্কারের জন্য পরিচিত। বছরের প্রথম দিনে এখানে যারা দোকান খুলেছেন তারা ধর্মীয় আচার পালন, দোকান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর নতুন খাতায় হিসাব তুলতে ব্যস্ত।
দোকানিরা বলেন, হালখাতার প্রচলন দিনে দিনে কমে গেছে। আর এবার ঈদের কারণে তো আরও নেই। আমরা দোকানে এসে শুধু পূজার আনুষ্ঠানিকতা করে দোকান বন্ধ করে দিবো। হালখাতা মূলত পাওনা টাকা আদায় করা। ঈদের কারণে সবাই বাড়ি চলে গেছে। তাই এবার করা হয়নি।
বছরের প্রথম দিনে নতুন খাতায় হিসাব তোলা অর্থাৎ হালখাতার উৎসব ছিল চিরায়ত। যেখানে বকেয়া আদায়ের লেনদেনে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক দৃঢ় হতো মিষ্টিমুখ করে। এখন তা দেখা যায় না খুব একটা, ঐতিহ্য মেনে কোথাও হালখাতা হলেও ক্রেতাদের সাড়া মেলে না।
করোনার পর থেকে হালখাতা শুধু নিয়মরক্ষার আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ। ব্যবসায়ীরা এখন হালখাতা বিমুখ, কেউ ভাবছেন আগামী বছরে নতুন করে কিছু করবেন।
পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারসহ আশপাশের প্রায় চার হাজার স্বর্ণের দোকানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন চললেও হালখাতার দেখা মেলেনি।
পুরান খাতা রেখে নতুন খাতা খোলার এ হালখাতা ঢাকায় যেমন খুব একটা জমেনি, মফস্বলের অবস্থাও কি তেমনই?
ত্রিপুরা রাজার শাসনামলে কুমিল্লার চকবাজারে গড়ে ওঠে ব্যবসাকেন্দ্র। খুব কাছেই ছিল গোমতী নদীর ঘাট। তাই নদী পথেই চলতো ব্যবসায়িক কার্যক্রম।
সময়ের পালাবদলে সেই চকবাজার এখন পরিণত ও বিস্তৃত। নববর্ষের হালখাতা আর গদিযাত্রার রেওয়াজ এ বাজারে বহু প্রাচীন। সনাতন ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ীরা পূর্বপূরুষের ঐতিহ্য মেনে এবারও নতুন বছরকে বরণ করছেন গদিযাত্রার মাধ্যমে।
তবে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির চর্চা ও আধুনিকায়নের প্রভাবে ঐতিহ্য হারাচ্ছে পুরনো সংস্কৃতি বলছেন ব্যবসায়ীরা।
এক ব্যবসায়ী বলেন, পুরনো খাতাগুলো গতকাল ক্লোজ হয়ে গেছে। আজ থেকে নতুন খাতা খুললাম। পাইকারি খাতা, মহাজনী খাতা, হিসাব-নিকাশের খাতা আছে। পুরান বছরের বাকি টাকা দিয়ে আবার নতুন করে তারা পণ্য নিয়ে যাবে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির কারণে আসলটা আর নাই।
তাদের প্রত্যাশা নতুন বছর ব্যবসায়ীদের জন্য সুখ-সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে নিয়ে আসবে।