শিকড়
সংস্কৃতি ও বিনোদন
0

বিলুপ্তির পথে মেয়েলী গীত

নদী মাতার এই দেশে নদীর স্রোতধারার মতোই এক সুর বইছে আমাদের লোকসঙ্গীতে। অঞ্চলভেদে নানা বৈচিত্র্য আর সুরের মূর্ছনায় এসব লোকসঙ্গীত গুণে মানে অনেক সমৃদ্ধ।

আবহমান পল্লী বাংলার এক নিভৃত ধারা ‘মেয়েলী গীত’। এই গীত আদতে গ্রামীণ নারীদের জীবনবোধের চেতনা থেকে উৎসারিত। সঙ্গীতের শুদ্ধ ধারার ছোঁয়া এই গীতে প্রায়শই থাকে না। এমন কী প্রচলিত পল্লীগীতির ভাবধারা থেকেও মেয়েলী গীত অনেকাংশে স্বতন্ত্র।

মুখে মুখে রচিত এই গীত পল্লীবধূরা দলবেঁধে গেয়ে থাকে। নেই কোন বাদ্যযন্ত্রের আড়ম্বর, কিংবা শুদ্ধ সুর বা ভাষারও নেই আধিক্য। বিষয় আর সুরের পরম্পরাও খুঁজে পাওয়া যায় না। যে সকল নারীরা এই গীত পরিবেশন করে তারাই মূলত এর শ্রোতা। 

ভাটি অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদে নারীদের মাঝে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মেয়েলি গীতের প্রচলন হয়ে আসছে। প্রজন্ম পরম্পরায় নতুনরা এসব গীত শিখে নিতো সহজেই। এই গীত তাদের সহজ সরল মনের ভাবনার প্রকাশ। মেয়েলি গীতে ধরাবাধা কোন নিয়ম নেই। তারপরও মনের কথা আর ছন্দের রসে এগিয়ে যায় গানের আখ্যান। সেই রসে নতুন ধান ঘরে তোলার গল্প, কখনও বধূ বিদায়ের দুঃখ কষ্ট। আবার পল্লীবধূর মনে গহীনের সুপ্ত বেদনা, থাকে হাস্যরস, কৌতুক বা ঠাট্টা মশকরা।

গ্রামের নারীরাই এর রচয়িতা, ধারক ও বাহক। একসময় বিয়ে কিংবা যেকোন আচার অনুষ্ঠানে নারীদের গীত অপরিহার্য অংশ ছিল। অনুষ্ঠান ছাড়াও ঘরের বারান্দায় কিংবা উঠানের কোণে কয়েকজন মিলে গীত গাইতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাজের ফাঁকে ফাঁকে চলে মেয়েলী গীত।

পল্লীর শিক্ষাবঞ্চিত নারীর সৃজনশীল প্রকাশ এই গীত। তবে কালের পরিক্রমায় এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে এই গীত। তবুও পল্লী-বাংলার কোনো নিভৃত কোণে এখনো হয়তো কোনো পল্লীবধূর কণ্ঠে ভেসে ওঠে এই গীত।