ভবিষ্যৎবক্তা ‘সিম্পসন্স’: কাকতাল না পরিকল্পনা?

‘দ্যা সিম্পসন্স’ কার্টুনের পোস্টার
‘দ্যা সিম্পসন্স’ কার্টুনের পোস্টার | ছবি: সংগৃহীত
0

বাস্তব হচ্ছে ভবিষ্যৎ বাণী। আর এই ভবিষ্যৎ বাণী বলে দিচ্ছে ৩০ বছর আগের এক কার্টুন। অবিশ্বাস্য লাগলেও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে কিন্তু আপনি বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি থেকে শুরু করে রাণী এলিজাবেথের মৃত্য এবং সব শেষ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ভবিষ্যৎ বাণী, সবই দিয়েছিল দ্যা সিম্পসন্স নামের একটি কার্টুন। অনুরাগীদের অতি আগ্রহ নাকি নাকি নির্মাতার সুপার পাওয়ার কীসের বলে এত ভবিষ্যৎ বাণী সত্য হচ্ছে তাই জানা যাবে এই প্রতিবেদনে।

ম্যাট গ্রেনিং এর সিচ্যুয়েশনাল কমেডি দ্যা সিম্পসন্স কার্টুন হরহামেশাই মানুষকে হাসাতে হাসাতে বলে দেয় কিছু সুদূর ভবিষ্যতের কথা। কার্টুনটির একাধিক পর্বের গল্পের সাথে মিলে যাচ্ছে বাস্তব ঘটনা।

দ্যা সিম্পসন্সের ভবিষ্যৎ বাণী –

ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবে এই ভবিষ্যৎ বাণী নাকি অনেক আগেই দিয়েছিল কার্টুনটি!

এদিকে টিকটক, রিলস, শর্টসে রীতিমতো ভাইরাল রাণী এলিজাবেথের মৃত্যুর ভবিষ্যৎ বাণীও করেছে সিম্পসন্স। দেখা যায় কার্টুন চরিত্রে রাণী এলিজাবেথকে একটি কাসকেটে পড়ে থাকতে যাতে লেখা ‘এলিজাবেথ II: ১৯২৬-২০২২’।

সম্প্রতি ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল সিম্পসনের নির্মাতা- এরকম একটি ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

আবার আইফোনের অটোকারেক্ট ফিচার নিয়েও ১৯৯৪ সালে নির্মিত দ্য সিম্পসন্সের একটা পর্ব আছে। আর আইফোনে অটোকারেক্ট অপশন যোগ হয় ২০০৭ সালে।

স্মার্টওয়াচ, ভিডিও কল এবং করপোরেট রোবটের ব্যবহারের ধারণাও ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম ম্যাট গ্রোনিং-এর দ্য সিম্পসন্সই দিয়েছে।

এছাড়া অ্যাপেল ভিশন প্রো নিয়েও ২০১৬ সালে ভবিষ্যৎ বাণী হয়েছিল বলেও তোলপাড় ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

আমেরিকার ‘টুইন টাওয়ার’ বিপর্যয়ের ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিল ‘সিম্পসন’। ১৯৯৭ সালের একটি পর্বে একটি চরিত্রকে সংবাদপত্র পড়তে দেখা যায়। সেই সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ৯ ডলার লেখা ছিল। পিছনেই ছিল দুইটি টাওয়ারের ছবি। এর চার বছর পরেই আমেরিকার ৯/১১ হামলা হয়।

২০১২ তে সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা হিগস-বোসন কণা বা ঈশ্বর কণা আবিষ্কার করেন। কিন্তু অবাক করা ঘটনা হলো এর এক দশক আগে ১৯৯৮ সালে হোমার গবেষক হিসেবে একটা ইকোয়েশন লেখে যা অ্যানালাইস করে দেখা যায় এটা হিগ্স বসন পার্টিকেলের ম্যাথমেটিকাল রিপ্রেজেন্টেশন।

২০০৬ সালের একটি পর্বে দেখানো হয়েছিল টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়েছে সিম্পসন পরিবার। যা ২৩ এর জুনে ডুবোযান টাইটানের ঘটনার সাথে মিলে যায়।

আবার কেউ কেউ দাবি করে করোনা মহামারি আর ইবোলা ভাইরাসের প্রেডিকশনও করেছিল কার্টুনটি।

এখন প্রশ্ন হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় হওয়া এই কার্টুনের এত প্রেডিকশন সত্য হলো কী করে? নির্মাতা কি নামিদামি কোনো জ্যোতিশি? কী বলছে ফ্যাক্ট চেকার?

নির্মাতারা অনুরাগীদের এই দাবিকে বলছেন কাকতালীয়। কার্টুনটির একজন প্রাক্তন লেখক ও প্রযোজক বিল ওকলে বলেন, ‘আমরা সাধারণত আগের ঘটনাগুলোকে ব্যঙ্গ করতাম, ভবিষ্যদ্বাণী নয়। ইতিহাস বারবার ফিরে আসে বলেই অনেক সময় মনে হয় আমরা ভবিষ্যৎ দেখেছিলাম।’

এদিকে ফ্যাক্টচেকারের মতে অনেক কিছুই বর্তমান ঘটনা ঘটার নতুন করে এডিট করা। আবার কিছু জিনিস অতিরঞ্জিত করেও প্রকাশ করে অনুরাগীরা।

১৯৯৩ সালে কার্টুনটিতে দেখানো হয় জাপানের ওসাকা ফ্লু। এটিকেই কোভিড ১৯ এর পরে কিছু পর্বের দৃশ্য এডিট করে করোনা ভাইরাস লিখা যোগ করা হয়েছে, যা মূল পর্বে ছিল না।

ট্রাম্পকে নিয়েও কার্টুনটি তৈরি হয় ২০১৭ সালের বাস্তব ঘটনার কয়েকদিন পর, ২০০০ সালে নয়। বার্ট টু দা ফিউচার এপিসোডের কোথাও ভাইরাল হওয়া দৃশ্যগুলো ছিলই না।

আবার ‘বার্ট টু দ্য ফিউচার’ পর্বে প্রথম মহিলা মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়ে লিসার দায়িত্বভার গ্রহণ করার সময়ের পোশাক আর ২০২৪ সালে নির্বাচনি প্রচারণায় হ্যারিসের পোশাকের মিল দেখে অনুরাগীরা তো মনেই করেছিলেন কামালাই বলছেন প্রেসিডেন্টের আসনে।

কিন্তু সে তো গুড়ে বালি। ভবিষ্যদ্বাণীকে মিথ্যে প্রমাণিত করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আসনে বসলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পই।

এদিকে ফ্যাক্ট-চেকারদের মতে, ‘দ্য সিম্পসনস’ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর তারিখ ভবিষ্যদ্বাণীই করেনি। বাস্তবতা হল কার্টুনটি এখন পর্যন্ত তার কোনো পর্বে প্রয়াত রাজার মৃত্যু দেখায়নি।

এবার আসি অ্যাপেলের ভিশন প্রো নিয়ে। রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালে প্রচারিত সিম্পসনস কার্টুনের আলোচ্য এপিসোড দেখানোর পূর্বেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেটের অস্তিত্ব ছিল।

৯/১১ হামলা ও ৯ ডলার ম্যাগাজিন কভার নিয়ে লেখকের মতে এটি একটি নিছক কৌতুক ছিল।

সিম্পসন এর আলোচিত ভিডিওটির সাথেও সম্প্রতি দুর্ঘটনার শিকার ডুবযান টাইটানের ঘটনার বেশকিছু অমিল রয়েছে।

এছাড়া তুরস্কের ভূমিকম্প বা নটোরডেমের আগুনের ঘটনাও কার্টুনটির বিভিন্ন এপিসোড থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করে একটি ভিডিও সম্পাদনের মাধ্যমে প্রচার করা হয়।

এবার আসি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে। ফ্যাক্ট চেকার বলছে, কার্টুনের ওই দৃশ্যের সঙ্গে বাস্তব ঘটনার ভিত্তি নেই। এই গুজবটি ২০১৯ এর একটা ভিডিও থেকে এসেছে।

‘দ্যা সিম্পসন’ কি তাহলে ভবিষ্যৎ বলে না? নাকি ম্যাট গ্রেনিং এর এই কার্টুন নিয়ে আগ্রহের কারণেই দুইয়ে দুইয়ে চার করছেন অনুরাগীরা?

এসএস