‘হোয়াইট গোল্ড’ নিয়ে রক্তঝরা কারবার; বালু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা

বালু উত্তলোন
বালু উত্তলোন | ছবি: এখন টিভি
0

সিন্ডিকেটের কাছেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার বালুর ব্যবসা। প্রশাসন, পুলিশ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরাই নিয়ন্ত্রণ করছে এই বালু মহাল সিন্ডিকেট। তাই সবাই বালুকে ‘হোয়াইট গোল্ড’ নামেই চেনে। আর এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতেও দ্বিধা করছে না বালুখেকোরা।

দুই চোখ যায় যেদিকে শুধু বালু আর বালু। হঠাৎ দেখে মনে হতে পারে এ যেন আরবের কোনো মরুভূমি। আদতে এটি ঢাকার অদূরে শীতলক্ষ্যা পাড়ের দৃশ্য। যেখানে চলছে অবৈধ বালু তোলার রমরমা ব্যবসা।

শুধু শীতলক্ষ্যা পাড়েই নয়, ফসলের জমি দখল করে, হাউজিংয়ের নামে বা নদী থেকে বালু তোলার অবৈধ বাণিজ্যের দেখা মেলে ঢাকার চারপাশেই। ঢাকার তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ছাড়াও পদ্মা বা মেঘনা নদীর পাড়ও এখন বালু গেটে পরিণত। আইন না মেনে বালু জমা করে বিক্রি যেন স্বাভাবিক ঘটনা। আর এসবের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাসীন ব্যবসায়ীদের হাতে। যাদের কাছে আইনের প্রয়োগ যেন নিছক একটি শব্দমাত্র।

সরকারি জায়গা দখল করে বালুর বাণিজ্য পুরোপুরিই অবৈধ সত্ত্বেও পুরোদমেই চলছে জায়গা দখল করে এমন দুর্বৃত্তায়ন। বালু ড্রেজিংয়ের ফলে নষ্ট হচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি নিষ্কাশন লাইনের মতো প্রয়োজনীয় পরিসেবাও। তবে এসব নিয়ে অভিযোগ বা মুখ খুলতে নারাজ ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে ভেকু দিয়ে কাজ করে, কোনো লোক আসে না। শুধু ভেকুর ড্রাইভার থাকে, আর কোনো লোক সামনে আসে না। এখন যে পরিস্থিতি, কিছু বললেই ঝামেলা, বাড়ির মধ্যে হামলা করবে।’

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এ বলা আছে পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে বালু তুলতে হবে। শুধু তাই নয়, সরকারি স্থাপনা সড়ক, রেল লাইন, সেতু, কালভার্টের এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু ড্রেজিংয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে এসব আইন মানছেন না ইজারাদাররা। যদিও এসব রোধে প্রশাসন কাজ করছে জানালেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘বাংলাদেশে টাকা দিলে সবই হয়। আমি যদি ১০ লাখ টাকা কামেই, সেখান থেকে ছয় লাখ টাকা ছড়িয়ে দিয়ে চার লাখ টাকা রাখলেও তো মানুষের অভাব পড়বে না।’

প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন হচ্ছে বিক্রির জন্য। এ নিয়ে এখন টিভির সাথে কথা হয় একজন বালু উত্তোলকের সাথে। তার দেয়া তথ্যে স্পষ্ট হয়, নিয়মবহির্ভূত বালু তোলার বিষয়টি। যার সাথে জড়িত প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিসহ রাজনৈতিক প্রভাবশালীরাও।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘এরা আইন মানে না। ক্ষমতা পাইছে, সেই ক্ষমতার বল দেখিয়ে বালু কাটছে। এখানে তো কোটি কোটি টাকার খেলা। আপনাকে, আমাকে মেরে ফেলতে কোনো দ্বিধাবোধ করবে না।’

এই বালু মহাল নিয়ে আমাদের কাছে অসংখ্য অভিযোগ জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভুক্তভোগীরা। শুধু রাজধানী নয়, এর বাইরেও সৌন্দর্যের অপরূপ ভূমি সিলেট সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সহ বিভাগের চার জেলায় ৮৯টি বালু মহল থাকলেও ইজারা যোগ্য রয়েছে ৫৪টি । তার মধ্যে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে স্থায়ী দুইটিসহ মামলা জটিলতায় ইজারা বন্ধ রয়েছে ৩৪টি বালুমহাল। কিন্তু কাগজে কলমে বন্ধ থাকলেও থেমে নেই বালু উত্তোলন। পরিবেশ প্রতিবেশ ধ্বংস করে নিয়মিত এসব স্থান থেকে অবৈধ উপায়ে চলছে বালু উত্তোলন।

এসএস